আব্দুর রাজ্জাক, সোনাতলা (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়া সোনাতলায় কিশোরীকে কৌশলে অপহরণ করে ধর্ষন; অতপর কয়েক দফায় অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। গত ১২ই জানুয়ারী ২০২৩ইং তারিখে নিজ বাড়ি থেকে আবারও অপহরনের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় সোনাতলা থানায় ভুক্তভোগীর মা শিমুলী বেগম একই এলাকার মোজাম্মেল শেখের ছেলে সবুজ মিয়াকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ দাখিল করেন।
আগের মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বালুয়া ইউনিয়নের উত্তর আটকরিয়া গ্রামের আব্দুল ওয়াহেদের মেয়ে মোছাঃ রোকেয়া আক্তার। দিন মজুর বাবার ৩ মেয়ের মধ্যে ছোট মেয়ে রোকেয়া খাতুন। গত ১৫ই জুলাই ২০১৭ সালে নিজ বাড়িতে সোলার প্যানেল লাগানোর জন্য পার্শ্ববর্তী ওয়াহেদের বাড়িতে থেকে স্ক্রু ড্রাইভার আনতে বলে বাবা। দীর্ঘ সময় ক্ষ্যাপন করার কারণে বাবা মেয়েকে খুজতে আসে সেখানে। সেখানে এসে দেখতে পায় মেয়ে ভাত খেতে বসছে। বাবা রাগান্বিত হয়ে মেয়েকে শাসন করে। পরবর্তীতে রোকেয়া বাবার ভয়ে ওয়াহেদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে, আর বাড়িতে দেখা পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে মেয়েকে না পাওয়ায় চিন্তায় পড়ে বাবা। পরবর্তীতে ১৮ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ পেয়ে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চন্ডিহারা বাজারস্থ বিশ্ব রোডের পশ্চিম পাশে অসুস্থ অবস্থায় মেয়ে রোকেয়াকে উদ্ধার করে অসুস্থ মেয়েকে সোনাতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরামর্শ অনুযায়ী মেয়ে কে শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে স্বাভাবিক হলে মেয়ে জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার সময় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলে পথিমধ্যে জনৈক রহমান মুন্সির বাড়ীর সামনে তিনমাথা মোড়ের বট গাছের নিচে পৌছা মাত্র সবুজ নামে ছেলে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে তাকে ফুসলায়ে জোরড়পূর্বক অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়।
ভুক্তভোগী আরও জানান, ১৫ জুলাই ২০১৭ইং রাত ৮ টা হতে ১৮জুলাই সকাল ১০ টা পর্যন্ত পালাক্রমে তাকে ধর্ষন করে। এ ঘটনায় মা শিমুলী বেগম (৩৮) বাদী হয়ে সোনাতলা থানায় একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। ধর্ষনের ফলে মেয়ে রোকেয়া গর্ভবতী হয় এবং পুত্র সন্তান ভূমিষ্ট হয়, পুত্র সন্তানের নাম রাকিবুল হাসান।
এদিকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২ইং সালে রাত্রি অনুমান ৮টার সময় রোকেয়ার মা অসুস্থ হয়ে
পড়ে। বাড়ির পাশ্বেই জনৈক এক মুদি দোকান থেকে খাবার স্যালাইন কিনতে যায় মেয়ে রোকেয়া খাতুন। পথি মধ্যে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে একই এলাকার মোজাম্মেল শেখের ছেলে সবুজ শেখ সঙ্গীয় একজনকে সাথে নিয়ে ধর্ষনের উদ্দেশ্যে অতর্কীত ভাবে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোড়পূর্বক মোটর সাইকেল যোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়। রোকেয়া বাড়িতে না ফেরায় বাবা-মা ও আত্বীয় স্বজন খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। কোন সন্ধান না পাওয়ায় ঐ রাতেই থানার শরনাপন্ন হয়। এক পর্যায়ে দায়িত্বরত অফিসার ইনচার্জ বিষয়টি শুনে তাৎক্ষণিক মেয়েটিকে উদ্ধার করতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন। রাত ২টার সময় থানা পুলিশ উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে উপজেলার বালুয়াহাট বড় বালুয়া নামে একটি ফঁাকা মাঠে শ্যালো মেশিন ঘরে ধর্ষন করতেছে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মেয়েটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় অপহরনকারীরা। সেখান থেকে থানা পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেয়। এ ঘটনায় রোকেয়ার পরিবার থানায় মামলা করার প্রস্তুতি নিলে, এলাকায় উভয় পরিবারের মধ্যে তোলপার উঠে। এক পর্যায়ে পারিবারিক ভাবে মিমাংশার চেষ্টা চলে। মিমাংশার সময় ক্ষ্যাপন হলে-রোকেয়ার পরিবার থানায় মামলা দিতে গেলে থানা পুলিশ মামলা না নিয়ে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। পরে রোকেয়া খাতুন নিজে বিজ্ঞ আদালতে গিয়ে অভিযুক্ত সবুজকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে ৪৮পি/২০২২(সোনাতলা) ধারা ৭/৯(১)/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। সে সময় সোনাতলা থানার মামলার তদন্তভার তৎকালীন দায়িত্বরত এসআই খালেক দায়িত্ব গ্রহন করে ৩১ জুলাই ২০২২ তারিখে বিজ্ঞ আদালতে চুড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরবর্তীতে পুনরায় ১২ই জানুয়ারী নিজ বাড়ি থেকে অপহরন হওয়ায়। এঘটনায় অভিযুক্ত সবুজ মিয়ার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরিবারের কাছ থেকে সবুজের মোবাইল ফোনের নাম্বার চাইলে তারা দিতে অস্বিকৃতি জানান।
তবে সবুজের মা জানান, আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফঁাসিয়েছে ডাক্তারী পরিক্ষায় আমার ছেলের কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বর্তমানে ভুক্তভোগী রোকেয়া আক্তারের মা শিমুলী বেগম জানান, গত ১২ই জানুয়ারী নিজ বাড়ি থেকে রাতে মেয়েকে পুনরায় অপহরন করায় ৪ বছরের শিশু রাকিবুলের মা’কে খুজে পেতে প্রশাসনের সর্বত্তম সহযোগীতা ও অপহরন কারীর কঠিন শাস্তি দাবী করেন।
এ ঘটনায় সোনাতলা থানার ইনেন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন জানান, গত ৩১ জুলাই ২০২২ ইং তারিখে দায়িত্বরত এসআই খালেক যাবতীয় মামলার কার্যক্রম তদন্ত করে চূড়ান্ত অভিযোগ পত্র বিজ্ঞ
আদালতে দাখিল করে। মামলা এখনও আদালতে বিচারাধীন। যাহা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইবুন্যাল আদালত ১, মামলা নাম্বার- ১২১পি/২০২১ সোনাতলা।
Posted ৮:৫৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৩
Alokito Bogura || Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD