শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
বগুড়ার শেরপুরে এ বছর আলুর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক। গত বছর আলুর দাম বেশি পাওয়ায় এবার বেশি পরিমানে জমিতে আলুর চাষ করেছে। এ উপজেলায় পাকড়ি, এস্টারিক্স, ক্যারেজ, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানোলা সহ প্রায় ১০ জাতের আলুর চাষ হয়ে থাকে।
বৈরি আবহাওয়ার কবলে পড়েনি তাই এবার আলুর বাম্পার ফলন হবে এবং স্বপ্ন পুরন হবে এই উপজেলার চাষিদের। উৎপাদন ভালো হওয়ার পাশাপাশি ন্যায্য দামও পাবেন তারা। গত মৌসুমে আলুর ভালো ফলন হলেও কিছুটা দাম কম হওয়াতে ক্ষতির মুখে পড়েছে। পাশাপাশি আলু ষ্টোর করে চরম লোকশান গুনতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। আগের সব দু:খ ভুলে এবছরও বিপুল পরিমাণ জমিতে নতুন করে আলু চাষ করেছেন শেরপুরের চাষিরা। কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে শেরপুর উপজেলায় লক্ষমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬২৫ হেক্টর। সেখানে লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আলু চাষ হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আলু ক্ষেতে ভাইরাস নেই বললেই চলে। তাই আলু চাষে কৃষকদের তেমন কোন সমস্যায় পড়তে হয়নি
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পোর্ষি, আমইন, পানিশারা, কুসুম্বী, দারুগ্রাম, খুরতা, দক্ষিন আমইন, কহিতকুল, তালতাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার মাঠজুড়ে যে দিকে চোখ যাবে সেদিকে শুধু দেখা যাবে আলুর ক্ষেত। গাছ ভালো হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছেন। তবে ক্ষেত থেকে আলু উত্তলনের সময় কাংক্ষিত দাম পাবেন কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছেন আলু চাষিরা। পোষি গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, এ বছর ১১ বিঘা জমি চাষ করেছি। আলু ক্ষেতের লক্ষণ দেখে ভালো মনে হচ্ছে। আর কিছুদিন গেলেই এসব জমি থেকে আলু তোলা হবে। ইতিমধ্যে আগাম জাতের কিছু কিছু জমির আলু বাজারে তোলা হয়েছে। বগুড়ার বিখ্যাত হাগড়াই আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি মন ১৬০০ টাকা দরে। অন্যান্য আলুর দাম কেজিপ্রতি ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। তিনি বলেন, এখন বাজারে আলুর দাম ভালো থাকলেও সামনে আলু তোলার উপযুক্ত সময়ে দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য ইতিমধ্যে আমরা আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার কোল্ডস্টোরেজগুলোতে যোগাযোগ করছি।
কিন্তু সেখানে ব্যবসায়ীরা আগেভাগেই বুকিং দেওয়ায় আমাদের মতো ছোট চাষিদের তেমন কোনো সুযোগ পাচ্ছিনা। দক্ষিন আমইন গ্রামের আলু চাষি আলহাজ্ব হারেজ জানান, আমি ৯০ বিঘা জমি চাষ করেছি। গাছ খুব ভালো হয়েছে। সব কিছুর দাম বেশি হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এবার বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এ বছর বেড়েছে সার, কীটনাশকের ও শ্রমের ব্যয়।
শেরপুর উপজেলার পানিসারা গ্রামের আলু চাষি ফজলু, আশরাফুল, মকবুল হোসেন আলোকিত বগুড়া’কে বলেন, গত বছর শুরুতে দাম ভালো পাওয়া গেলেও শেষের দিকে দাম কমে গিয়েছিল। তবে এ মৌসুমে আলু চাষের জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া হওয়ায় ভালো ফলনের আশা করছেন তারা। ইতিমধ্যে উপজেলার কোল্ড স্টোরেজগুলোতে বড় বড় ব্যবসায়ীরা দখলে নেয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
এদিকে আগাম জাতের আলু তুলতে শুরু করেছে অনেক চাষি। তাদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক। তারা বলেন, এক বিঘা জমিতে ১শ থেকে ১২০ মন আলু হয়। বর্তমানে আলুর দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। মৌসুমের সময় আমরা দাম পাই ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা। সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। এজন্য চাষকে লাভজনক করে তুলতে আলুর দাম বৃদ্ধি করার দাবি জানান তারা।
শেরপুর উপজেলার কৃষি অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌস আলোকিত বগুড়া’কে বলেন, উপজেলার কোথাও আলুর ফলন বিপর্যয় হয়নি। আশা করা যাচ্ছে সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় না হলে আলুর বাম্পার ফলন হবে।
Posted ৭:১৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৩
Alokito Bogura || Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD