বগুড়ার শেরপুরে আদিবাসীদের উপর হামলার ঘটনায় আজ ১৫ জানুয়ারী সকালে বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্র নাথ সরেন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ০৮ জানুয়ারী ২০২৩ বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের সন্তোষ সিং এর পৈতৃক জমিসহ আম্বইল ও গোঁড়তা মৌজার আদিবাসীদের ভোগ-দখলে থাকা খাসজমি স্থানীয় (ভূমিদস্যু সলেমান মাস্টার, আছপ আলী, আরিফুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন (বাচ্চু), মহাব্বত, ফারুক, হানিফ, সবুজ, জুয়েল, নজু, স্বপন, কালাম, সালাম, সাঈদ, সাইফুল, জহুরুল, ফজলু, বিপুল হুজুর, দুলাল, বারিক, টুটুল ও আকুল প্রমুখের নেতৃত্বে জবর-দখলের উদ্দেশ্যে হামলা চালায়।
এ হামলা থেকে আদিবাসী নারী, দিনমজুর, শ্রমজীবী, শিক্ষার্থীদের কেউই রেহাই পাননি। এ বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয়েছে ও তাহা বিচারাধীন। গত সপ্তাহ জুড়ে আদিবাসীদের উপর দফায় দফায় হামলা চালিয়ে আদিবাসী নারী শিশু ও বৃদ্ধদের জখম করে। আহতরা হলেন সুজন সিং, সুখী রানী সিং, রিপন কুমার সিং, মিনা রানী সিং, জইসা সিং, বসন্ত সিং, শ্রীকান্ত মাহাতো, উজ্জ্বল সিং, সুজন সিং, আকাশ সিং, নাদু সিং, মালতী বালা, শংকরী বালা, সোহাগী বালা, সুশীল সিং প্রমুখ।
হামলাকারী ভূমিদস্যু সন্ত্রাসীরা আদিবাসী নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধদের হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে এবং বেধরক মারধর করে পুকুরের পানিতে ফেলে দেয়। পরে শেরপুর থানা পুলিশ গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান কলেজ হাসপাতাল এবং শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। গত ১০ জানুয়ারী ২০২৩ বিকেলে উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় উভয় পক্ষকে নিয়ে সমঝোতা বৈঠক হয়। সমঝোতা বৈঠক থেকেই উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা ১০ দিনের মধ্যেই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং উভয়পক্ষকে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখবার আহ্বান জানায় ।
কিন্তু তার পরদিনই ১১ জানুয়ারি সকালে পুনরায় আম্বইল বেলতলা মাদ্রাসা মসজিদের মোয়াজ্জিন খেজুর আলী, জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে ৪টি মসজিদ থেকে ঘোষণা দিয়ে আক্রমণ করা হয়। এই হামলায় সুজন সিং এবং উজ্জ্বল সিংকে মারপিট করা হয় পুলিশের উপস্থিতিতে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স এসে হামলাকারীদের সরিয়ে দেয়। আক্রান্তদের জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত ১৪ জানুয়ারী ২০২৬ (শনিবার) কেন্দ্রীয় জাতীয় আদিবাসী প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে নেতৃবৃন্দ আহতদের সাথে কথা বলেন ও তাদের চিকিৎসার খবর নেন। তারা জানতে পারেন স্থানীয় আদিবাসীরা চিকিৎসা উপকরণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস কিনতে বাজারে যেতে পারছেন না, স্কুলে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা, চাকরিজীবীগণ কর্মস্থলে, দিনমজুর কাজে যেতে পারছে না। আতঙ্কের মানবেতর জীবন-যাপন করছেন তারা। ভূমিদস্যুরা মোটরসাইকেল, ইজিবাইক নিয়ে মোহড়া দিয়ে হুমকী দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় আদিবাসীরা।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং অবিলম্বে হামলাকারী অপরাধীদের গ্রেফতার, আহতদের চিকিৎসা ব্যয়সহ ক্ষতিপুরণ দাবি করেন। ভূক্তভোগী আদিবাসীদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা, জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও দাবি করেন তারা। নেতৃবৃন্দ সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় ও ভূমি কমিশন গঠন করার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানান। দাবি পূরণে তারা আগামী ১৮ জানুয়ারি শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় ঘেরাও, ২৪ জানুয়ারি বগুড়া শহরের সাতমাথায় প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসুচী ঘোষনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বাসদের আহবায়ক সাইফুল ইসলাম পল্টু, জয়নাল আবেদীন মুকুল, কিবরিয়া হোসেন,সন্তোষ সিং সহ আহতেরদের অনেকে।
Posted ৫:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
Alokito Bogura || Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD