সলোকি বেগম ডাকনাম ছালেহা বেগম। স্বামী মৃত তমিজউদ্দিন সরকার। তার বাড়ি নাটোরের সিংড়া উপজেলার কলম ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুরের কৃষ্ণপুর গ্রামে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সলোকি বেগমের বয়স ৬৬ বছর কিন্তু বাস্তবে তার বয়স ৯০ বছরের উর্দ্ধে। সলোকি বেগমের স্বামী পেশায় একজন স্বর্ণকার ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় এক ছেলে ও পাঁচ মেয়েকে রেখে সাপের কামড়ে মারা যান সলোকি বেগমের স্বামী তমিজউদ্দিন সরকার। স্বামী মারা যাবার কিছুদিন পর পাঁচ মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মেয়ে সুমি ৭ বছর বয়সে নদীতে পড়ে মারা যায়। সবচেয়ে বড় ছেলে ইসব সরকার একজন শ্রবণ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি। স্বামী ও ছোট মেয়ে মারা যাবার পর সলোকি বেগমের জীবনে নেমে আসে এক অন্ধকারের কালো ছায়া। নিজের পাঁচ সন্তানের মুখে অন্নের জোগান দিতে একা তারপক্ষে সম্ভব হতো না। তাই পাড়া-পড়শি, আত্মীয়-স্বজনের কাছে সাহায্য সহযোগিতা করে নিজের সংসার চালাতেন। চার মেয়ে যখন বিয়ের উপযুক্ত বয়স হয়েছিল অর্থের অভাবে মেয়েদের বিয়ে দেওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। তিন মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য অন্যের নিকট সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে কোনরকমে বিয়ে দিয়েছিলেন সলোকি বেগম। কিন্তু চতুর্থ মেয়েকে বিয়ে দিতে গিয়ে অর্থের অভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। কোন উপায় না পেয়ে স্বামীর চার শতক জায়গার উপর বাড়িটি বিক্রি করে ছোট মেয়েকে বিয়ে দেন।
ঘর-বাড়ি না থাকায় কয়েকবছর বছর ঠাই হয় মামার বাড়ি। একসময় জীবিকার তাগিদে মামার বাড়ি থেকে শ্রবণ ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বড় ছেলেকে সাথে নিয়ে ২০বছর পূর্বে পাড়ি জমান পার্শ্ববর্তী জেলা বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ওমরপুর গ্রামে।
কান্না জর্জরিত কন্ঠে বৃদ্ধা সলোকি বেগম বলেন, ঘর-বাড়ি না থাকায় আমি নন্দীগ্রামের ওমরপুরে আমার প্রতিবন্ধি ছেলেকে নিয়ে বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে থেকেছি। সারাদিন গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে সাহায্য করে যা পাই তাই দিয়ে কোনমতে নিজে এবং আমার প্রতিবন্ধি ছেলেকে খাওয়াই। ওমরপুর বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে থেকে তিনি জীবন যাপন করেছেন কিন্তু আলম নামের একজনের বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে দুই বছর আগে একটি মোবাইল ও নগদ টাকা হারিয়েছেন। মোবাইলে তার ছেলে ইসবের নামে প্রতিবন্ধি ভাতা টাকা পেতেন। আলমের বাড়ি ছেড়ে বর্তমানে বৃদ্ধা সলোকি বেগম ওমরপুর হাটের পার্শ্বে হাসেন আলী বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন।
বৃদ্ধা সলোকি বেগম আরও বলেন, এত বছর বয়স হয়েছে তবুও কোন বয়স্ক ভাতা কার্ড পাইনি। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী গরীবদের জন্য ঘর দিচ্ছেন সেটা শুনে মাঝে মধ্যে স্বামীর জন্মস্থান কলম ইউনিয়নে মেম্বার, চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলাম কিন্তু তারা বয়স্ক ভাতা কার্ড এবং সরকারি ঘর পাইনি। বয়স্ক ভাতা ও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে প্রতিবন্ধি ছেলেকে নিয়ে নিরাপদে থাকতে চান সলোকি বেগম।
সে জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এর প্রতি আকুল আবেদন করেছেন।
সলোকি বেগমের ব্যাপারে জানতে চাইলে সিংড়ার কলম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মইনুল হক চুনু বলেন, আমার ইউনিয়নে কোন ভূমিহীন ব্যাক্তি বাদ নেই যিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাননি। এছাড়া বয়স্ক-বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য মাইকিং করা হয়েছে। সলোকি বেগম যদি আমাদের কাছে আসে তবে আমরা তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করব।
Posted ৪:৩০ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD