দেলোয়ার হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ শত শত বছর ধরে মাহালী জনগোষ্ঠী বাঁশ ও বেতের তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র নিয়ে কাজ করে আসছেন। মূলত বাঁশ নিয়েই তাদের কারবার। তাই মাহালী সম্প্রদায়কে বলা হয় বাঁশ শিল্পের কারিগর। বংশপরম্পরায় তারা এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সম্প্রদায়ের লোকজন সারাবছরই গৃহস্থালি জিনিসপত্র যেমন- ডালা, টুকরি, চাটাই, খইচালা, ঝাঁড়–, ঝুড়ি মাছ ধরার খলসানী (চাঁই) তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। পরিবারের কর্তাসহ সব সদস্যই কৃষি কাজের পাশাপাশি এসব কাজ করে থাকেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে তাদের কাছ থেকে এসব কিনে নিয়ে যান। আবার কেউ কেউ পার্শ্ববর্তী বাগজানা, রতনপুর, করিয়া,চানপুর, শালাইপুর, পাঁচবিবি হাটবারের দিন হাটে বসে ডালা, টুকরি, চাটাই, খইচালা, ঝাঁড়, ঝুড়ি মাছ ধরার খলসানী (চাঁই) বিক্রি করে থাকেন।
পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের কুটাহারা গ্রামে ও পৌর এলাকার দমদমা মহল্লার মাহালী সম্প্রদায়ের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার বসবাস করেন। তবে এই সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে চরম ক্ষোভ ও অভিমান। মাহালী সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে আলাপকালে আলোকিত বগুড়াকে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও অভিমানের কথা ব্যক্ত করেছেন। কথা হয় কুটাহারা গ্রামের সুমন টুডুর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছি। না পাই কোনো সরকারি ঋণ, না পাই কোনো সরকারি সহায়তা। মাঝে মধ্যে এনজিওসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজন শুধু পরিচয়পত্রের ফটোকটি আর বাড়িঘর ও কাজ করার (ফটো) ছবি তুলে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু কোনো কাজ করেন না। ফটো তোলা পর্যন্তই শেষ। তাই জন্মের পর থেকেই বাঁশ ও বেতের সঙ্গে আমাদের সখ্যতা। এই সম্প্রদায়ের কেউ কেউ কৃষি কাজ করলেও মূল পেশা বাঁশ দিয়ে গৃহস্থালি জিনিসপত্র তৈরি করা।
বাসন্তী মুরমু বলেন, কুটাহারা গ্রামে ২৫ টি পরিবারের বসবাস। কিন্তু (কাউও হামার ছও) কেউ আমাদের দিকে ঘুরেও দেখে না। তাই বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছি। পাশাপাশি কৃষি জমিতে কামলা দেই। অবসরে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র বানাই। কিন্তু বর্তমানে বাঁশের দাম বাড়ার কারণে আর এই ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন।
শ্রীমতী মৃরমু বলেন, একসময় বাঁশের তৈরি এসব গৃহস্থালি জিনিসপত্রের প্রচুর চাহিদা ছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে প্লাস্টিকের তৈরি হুবহু এসব পণ্যের কারণে বাঁশের তৈরি এসব পণ্যের কদর কমে যাচ্ছে। এর ফলে কঠিন হয়ে পড়েছে মাহালী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী এই পেশাকে ধরে রাখা। সরকার যদি দেশীয় বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিতো, তাহলে হয়তো এই পেশা ধরে রাখা সম্ভব হতো।
একই গ্রামের মেঘলাল মার্ডি বলেন, সবাই শুধু ঋণ দেওয়ার কথা বলে কাগজপত্র আর জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে যায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই শেষ। ঋণের কোনো খবর নেই। আদৌ আমরা ঋণ পাবো কিনা সেটিও কেউ নিশ্চিত করে বলেন না। এর আগেও পরপর দুইবার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ঋণের জন্য আবেদন জমা দিয়েছি। কিন্তু খোঁজ নিলেও শুধু বলা হয় হচ্ছে-হবে।
বাগজানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নাজমুল হোসেন আলোকিত বগুড়াকে বলেন, মাহালী সম্প্রদায়ের লোকজন পেশা হিসেবে বাঁশ ও বেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বাঁশ ও বেতের তৈরি এসব গৃহস্থালি জিনিসপত্র পরিবেশবান্ধব। তাই এই শিল্পকে টিকে রাখতে সাধ্যমত সহায়তা করা হবে।
পাঁচবিবি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মোঃবরমান হোসেন আলোকিত বগুড়াকে বলেন, মাহালী সম্প্রদায়ের লোকজনদের কে প্রশিক্ষণ সহ নানা সরকারি সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকি।
Posted ৩:২৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ নভেম্বর ২০২২
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD