বগুড়ার সোনাতলায় পৌর কাজী তারাজুল ইসলাম কর্তৃক স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিকাহ্নামা (নকল) সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। আজ ২৮ ফেব্রæয়ারী সোমবার দুপুরে পৌর কাজী অফিসে নিকাহ্নামা (নকল) জালিয়াতি করে সরবরাহের বিষয়ে জানতে আসা স্বম্পা বেগমের সাথে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এঘটনায় আহত সম্পা বেগম সোনাতলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বিবাহের এফিডেভিট ও কাগজপত্রাদি সুত্রে জানা যায়, গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার জুমারবাড়ী ইউনিয়নের বসন্তেরপাড়া গ্রামের মোহাম্মাদ আলী মন্ডলের ছেলে মুকুল মন্ডলের সাথে একই ইউনিয়নের বাজিতনগর গ্রামের শামছুল হক বেপারীর মেয়ে স্বম্পা বেগমের সাথে পারিবারিক ভাবে বিবাহ হয়। ঘর সংসার করাকালীন উভয়ের মধ্যে ভুল বোঝা-বুঝির কারণে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। এরপর উভয়ের মধ্যে একাকীত্ব জীবন যাপন করা তাদের মধ্যে কঠিন হয়ে দাড়ায়। এক পর্যায়ে তারা দুজনে আবারো ঘর বাধাঁর সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। উভয়ের সম্মতিক্রমে গত ০৯ ডিসেম্বর-২০২১ ইং তারিখে বগুড়ার জেলার সোনাতলা উপজেলা পৌর কাজী তারাজুল ইসলামের অফিসে দুজনের স্বাক্ষী সমেদ উপস্থিতে পুনরায় রেজিষ্ট্রি করে। সেখানে দেখা যায়, এফিডেভিটে উল্লেখ আছে ৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে বগুড়ার সদর কাজী অফিসে প্রয়োজনীয় স্বাক্ষী সমদে উপস্থিতিতে ৫ লক্ষ টাকা দেন মোহর ধার্য্য করে ১হাজার টাকা নাকফুল বাবদ নগদ বুঝিয়া দিয়ে ৪লক্ষ ৯৯হাজার টাকা বাকী রাখিয়া বিবাহ দেখান, যার বই নং০৮/২১ পাতা নং-৭২।
এছাড়াও বগুড়া জেলা নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে সম্মুখে উপস্থিত হইয়া এভিডেভিটের মাধ্যমে বিবাহ ঘোষনা করেন। এই দ্বিতীয় বার বিবাহ করার পর থেকে আবারও দুজনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। একপর্যায়ে স্বম্পা বেগম জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকায় নার্সিংয়ে চাকুরী করেন। অন্যদিকে স্বামী মুকুল তার বাড়িতে অবস্থান করে। এরপর স্বম্পা বেগম নিকাহ্নামা (নকল) উঠানোর জন্য কয়েক বার কাজীর মোবাইল ফোনে এবং সরাসরি অফিসে এসে ঘুরে যায়। পরবর্তীতে দেবে দেবে বলে কালক্ষেপন করে ওই পৌর কাজী। এক পর্যায়ে গত ২৭ ফেব্রæয়ারী সম্পা বেগমের নিকটতম এক আত্মীয়র নিকট একটি নিকাহ্নামা (নকল) দেয়। যাহাতে উল্লেখ্য ১১/১২/২০২১ ইং তারিখে বিবাহে দেনমোহর মোট ৫০হাজার টাকা ধার্য্য করে তার মধ্যে নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা বাকী রাখিয়ে নিকাহ্নামায় (নকল) উল্লেখ করে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী স্বম্পা বেগম খবর পেয়ে ঢাকা থেকে আজ ২৮ ফেব্রæয়ারী সোমবার দুপুরে ছুটে আসে পৌর কাজী অফিসে। এরপর স্বম্পা বেগম পৌর কাজী তারাজুল ইসলামের কাছে জানতে চায় তার বিবাহের সময় ৫লক্ষ টাকা দেনমোহরানা ধার্য্য করা হয়। এখন যে (নকল) দিয়েছেন তাতে উল্লেখ আছে ৫০হাজার টাকা দেনমোহরানায় তার মধ্যে নগদ ৩৫হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়েছে এবং ১৫হাজার টাকা বাকী উল্লেখ আছে।
এঘটনায় ভুক্তভোগী সম্পা বেগম জানায়, কাজী আমার স্বামী মুকুল এর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে এতদিন কালক্ষেপন করে একটি জাল নিকাহ্নামা (নকল) তৈরী করে দেন। সেই সব বিষয়ে জানতে চাওয়ায় পৌর কাজী তারাজুল ইসলাম, তার স্কুল পড়ুয়া ছেলে ও কাজীর অফিস সহকারী মিলে বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করে আমাকে অফিস থেকে বের করে দেন। এসময় আমি নিকাহ্নামার অর্জিনাল কপি চাইলে তারা অতর্কিত ভাবে আমাকে ও আমার ভাই খোকনকে মারপিট করেন।
তিনি আরও জানান, ওই সময় নিকাহ্নামার ৫ লক্ষ টাকার মোহরানা ফি ও এভিডেভিট করতে ১৭ হাজার টাকা নেয় পৌর কাজী তারাজুল ইসলাম।
এ দিকে স্বম্পা বেগমের আত্মীয় ওয়াসিম জানান, গত ২৭ ফেব্রæয়ারী রবিবার বিকালে পৌর কাজী তাকে ডেকে ওই জাল নিকাহ্নামা প্রস্তুত করে ৫০হাজার টাকা দেনমোহরানা তুলে নিকাহ্নামা (নকল)টি তাকে দিয়ে বলে স্বম্পাকে এটা দিয়ে এসে আমার সাথে দেখা করো, বিনিময়ে তোমাকে কিছু টাকা দিবো।
এ বিষয়ে পৌরকাজী তারাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, কিছুদিন আগে আমি রেজিষ্ট্রি করেছি যাহার নিকাহ্নামা (নকল) গত কালকে সরবরাহ করেছি। আজ ওই মেয়ে কিছু ছেলে পেলে নিয়ে আমার অফিসে এসে ৫লক্ষ টাকা দেনমোহরানা তুলতে বলে। আমি তুলতে রাজি না হলে ছেলে পেলে আমাকে অকর্থ্য ভাষায় গালা-গালি করে এবং আমাকে মারপিট করে।
এ বিষয়ে সোনাতলা থানা অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাটিয়ে দেই এবং আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠাতে বলি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নাম প্রকাশে অনইচ্ছুক কয়েকজন জানান, কাজী তারাজুল বিভিন্ন অনিয়ম করে আসায় প্রতিনিয়তই তার অফিসে কথা কাটা-কাটির ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী স্বম্পা বেগমসহ স্থানীয় লোকজন পৌর কাজীর এমন কর্মকান্ডে তার শাস্তির দাবি করেছেন।
Posted ৮:২৯ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Alokito Bogura। Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD