কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে ঈদুল ফিতরের আনন্দকে উপভোগ করতে সিরাজগঞ্জ শহরের কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির মাঝে ঘুরে বেড়ানো। উন্মুক্ত বিনোদন স্পটের খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধ বাতাসে প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে চায় বিনোদন প্রেমিরা।
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে যমুনার পাড় ঘুরে দেখা যায়, হাজারও মানুষ নদী পারের হার্ডপয়েন্ট ও শহর রক্ষা ক্রসবারগুলোতে দর্শনার্থীরা দাঁড়িয়ে উপভোগসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে সেলফি তুলছেন। কেউ কেউ নৌকায় করে নদীতে ভাসছেন, যাচ্ছেন ঘাট থেকে কাছাকাছি চরগুলোতে। এদিকে, দুই স্থানেই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা দিতে তৎপর আছে পুলিশের টহল দল।
জানা যায়, যমুনার নদী বেষ্টিত শহর সিরাজগঞ্জ। রাক্ষসী যমুনা এক সময় শহরবাসীর কাছে ছিল অভিশাপ। সেই অভিশপ্ত প্রকৃতি কন্যা যমুনা এখন বিনোদন প্রেমী মানুষের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। যমুনার পাড়ে শহর রক্ষা বাঁধ হার্ডপয়েন্ট ও উপজেলার মধ্যে চারটি ক্রসবার এলাকা সৌন্দর্যের লীলা ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এসব বাঁধ এখন বিনোদন প্রেমি মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও হার্ডপয়েন্ট এলাকায় শহীদ শেখ রাসেল শিশুপার্ক এবং উন্মুক্ত এই বিনোদন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই ছুটির দিনসহ যেকোনো সময়ে সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের জেলার মানুষগুলোর গন্তব্যস্থল হয় যমুনার পাড়। প্রতিদিনই বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠে যমুনার বুকের চারটি ক্রসবার ও শহর রক্ষা বাঁধ। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রাশেদুল হাসান রাশেদ বলেন, গরমে শহর রক্ষা হার্ডপয়েন্টে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছি। দিন শেষে প্রকৃতির একরাশ স্নিগ্ধ বাতাস পেতেই এখানে ছুটে আসি। পরিবারের সদস্যদের নির্মল বিনোদনের স্বাদ পাওয়াতেই এখানে নিয়ে এসেছি।
শহরের সয়াধানগড়া উত্তর পাড়ার স্বামী ও সন্তানসহ বেড়াতে আসা সাইয়েদা আফরোজ গৃহিনী বলেন, সারাদিনই সংসারে অনেক কাজ করতে হয়। স্বামীও ব্যস্ততার মধ্যে থাকেন। একটু সময় পেলেই এখানে বেড়াতে নিয়ে আসেন। এখানে আসলে ভালো লাগে। বিশেষ করে বাচ্চারা আনন্দিত হয়।
অটোরিক্সা চালক রোমান আহমেদ, সিএনজি চালক রাজু শেখ, কাচামাল ব্যবসায়ি আলম সেখসহ বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ, সরকারি-বেসরকারি চাকরীজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এসেছেন উন্মুক্ত এই বিনোদন কেন্দ্রে। কেউ এসেছেন পরিবার পরিজন কেউ বা বন্ধুদের সঙ্গে। বিনোদন প্রেমিরা বলেন, বাঁধগুলো নির্মাণ হওয়ায় একদিকে যমুনার ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে শহর-তেমনি এ স্থানগুলো হয়েছে দর্শনীয়।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিৎ সরকার বলেন, যমুনার ভাঙন থেকে সিরাজগঞ্জকে রক্ষার জন্য নির্মিত হওয়া এসব বাঁধগুলোকে পর্যটন স্পট গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে বাঁধের উপরে কয়েক মিটার পরপর নির্মাণ করা হয়েছে বসার আসন। এছাড়াও ক্রসবার বাঁধগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যমুনার পাড়কে পূর্ণাঙ্গ পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করতে পাউবো বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসকল কর্মসুচী বাস্তবায়নের মাধ্যমে যমুনার পাড়কে দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ঈদের ছুটিতে যমুনা নদীর পাড় ও ক্রসবারগুলোতে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসে। তাদের নিরাপত্তার জন্য আমাদের একটি মোবাইল টিম আছে। তারা সার্বক্ষণিক ওই এলাকায় থাকছে। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নদীর পাড়ে প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে।
Posted ১:৩৮ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD