শস্যভান্ডার খ্যাত হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ জেলা। বর্তমানে স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় বল সুন্দরীসহ উন্নত জাতের বরই কৃষকের ভাগ্যে উন্নয়নে নতুন চমক সৃষ্টি করেছে। বরই বাগানের ডালে ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে সু-স্বাধু মিষ্টি বরই। লাল আপেলের মতো দেখতে। স্থানীয়দের কাছে কাশ্মীরি বরইগুলো আপেল কুল, বল সুন্দরী, বাড়ি কুল ও টক-মিষ্টি হিসেবে পরিচিত।
ইতোমধ্যে বাগান থেকে বরই সংগ্রহ ও বাজার জাতকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে বাজারদর ভালো থাকায় বরই চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। স্বল্প সময়ে অধিক ফলন ও লাভবান হবার ফলে বরই চাষে ঝুঁকছে চাষীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবছর জেলার সদর উপজেলায় ৭৬, শাহজাদপুর ৫, উল্লাপাড়া ২, কাজিপুর ৩৮, রায়গঞ্জ ২৫, বেলকুচি ১৮, কামারখন্দ ৬, চৌহালী ৩ ও তাড়াশ ২১ সহ মোট ১৯৪ হেক্টর জমিতে আপেল কুল, বল সুন্দরী ও বাড়ি কুল বরইগুলো চাষ হয়েছে।
জানা যায়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের খাঘা গ্রামের স্কুল শিক্ষক জুলফিকার আলী ২০০৯ সাল থেকে আপেল কুল চাষ করে আসছেন। সাড়ে ৭ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে তিনি এই কুল বরই চাষ করছেন। ২০০৯ সালে ১০০ চারা দিয়ে শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে ২৫০টি গাছ রয়েছে। প্রতিবছর এই গাছগুলোর পরিচর্যা ও জমির খরচ হয় প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। আর প্রতি বছর ফল বিক্রি করেন ৫ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা।
সফল কুল চাষী জুলফিকার আলী জেলার কাজীপুর উপজেলার বীর শুভগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি বর্তমানে তিনি একজন সফল কুল চাষি হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
জুলফিকার আলী বলেন, ২০০৯ সালে ৬৫ হাজার টাকায় সাড়ে ৭ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে কুল চাষ করে আসছি। প্রতি বছর জমির ভাড়া ও বাগান পরিচর্যায় প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। প্রথম দুই বছর খুব একটা লাভ করতে পারিনি। কারণ প্রথম অবস্থায় বুঝতে পারিনি। আস্তে আস্তে এখন সব ঠিক হয়েছে।
জুলফিকার আলী আরও বলেন, প্রতিটি গাছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি আপেল কুল ধরেছে। বাগানে প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা বিক্রি করছি। দামটাও বেশ ভালো পাচ্ছি। বরইগুলো দেখতে সুন্দর ও খেতেও খুব মিষ্টি হয়েছে। বাগান থেকে কুল সরাসরি পাইকারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে।
একই জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনা ব্রিজ এলাকার কৃষক ফজলুল হক ভারত থেকে দেড় বছর আগে নতুন জাতের বরইয়ের চারা সংগ্রহ করেন। এই চারা ৩ বিঘা জমিতে রোপণ করেন তিনি। পরে এই চারা থেকে সুস্বাদু বরই এবং ফলন ভালো হওয়ায় গ্রামের অন্য কৃষকদেরও এই জাতের বরই চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষক ফজলুল হক বলেন, দেশে অনেক রকমের বরই পাওয়া যায়। আমি কৃষি অফিস থেকে পরামর্শ নিয়ে সিডলেস বরই সম্পর্কে জেনে এই চারা সংগ্রহ করে রোপণ করি। বর্তমানে আমার বাগানের প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় বরই ঝুলছে। ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজারমূল্য ভালো থাকায় লাভের আশাবাদী আমি। এছাড়া ফলের পাশাপাশি গাছের কলম তৈরি করে বিক্রির উদ্যোগও নিয়েছি।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষক জুলফিকার আলী ও ফজলুল হকের কুল বরই চাষ দেখে এলাকার লোকজন উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেকেই কুল চাষে এগিয়ে আসছেন। অনেকেই তাদের দেখে কুল চাষ শুরু করেছেন। যে কেউ তাদের কাছ থেকে সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারে।
বরই বাগানের শ্রমিক সজিব ও সোহেল বলেন, এই বাগান হওয়ায় এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। অনেকে এখন বরইবাগানে কাজ করে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছে। বাগানে বরইগাছের গোড়া পরিষ্কার, স্প্রে করা, সার দেওয়া, গাছ থেকে বরই উত্তোলন করে বাজারে নেওয়াসহ নানা কাজে ব্যস্ত থাকেন তাঁরা।
সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ আবু হানিফ বলেন, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উন্নত জাতের আপেল কুলের চাষ হচ্ছে। জুলফিকার আলী ও ফজলুল হকসহ ২০/২৫ এখন অভিজ্ঞ কুল চাষি। তারা আপেল কুল চাষে সফলতা পেয়েছেন। আমাদের কৃষি অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি। তাদের দেখে আরো মানুষ এই কাজে উৎসাহিত হবেন বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
Posted ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৬ জানুয়ারি ২০২২
Alokito Bogura। Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD