একদিকে যমুনা নদীর ভাঙ্গনে সর্বশান্ত, অন্যদিকে করোনার কারণে কলকারখানা বন্ধ। সংসারের ঘানি টানতে নিরুপায় হয়ে গেছে এ অঞ্চলের শ্রমিকদের পথ চলা। যমুনার পাড়ে এমনি এক পরিবেশে পোষাক কারখানা গড়ে ওঠায় অসহায়, হতদরিদ্র বেকার শ্রমিকদের জীবনে আশার আলো দানা বেঁধেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদীর বিধ্বস্ত উপজেলা কামালপুর ইউনিয়ন কড়িতলায় ভিএম গার্মেন্টস এন্ড হোসিয়ারী নামে নিরিবিলি পরিবেশে ব্যক্তিগত উদ্দ্যেগে গড়ে তোলা হয়েছে পোষাক কারখানা। বড়দের গেঞ্জি, র্টি শার্ট, ট্রাউজার, ছোটদের বাহারি পোশাক তৈরি করার জন্য অল্প পরিসরে গড়ে উঠেছে এই পোশাক কারখানা। কারখানায় ঢুকেই চোখে পড়ল সারি সারি সেলাই মেশিনের চাকা ঘোড়ার শব্দ, কাপড় কাটা কাঁচির কচ কচ শব্দ। একদল নারী-পুরুষ শ্রমিক যে যার মতো সমান তালে কাজ করেছেন। দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
কাজের ফাকে কথা হয় সেলাই মেশিন অপারেটর উপজেলার বয়রাকান্দি গ্রামের শ্রীমতি মায়া রানী (২৮) সাথে । ৩বার যমুনা নদী ভাঙ্গনের পর ওই গ্রামের বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। অসুস্থতার কারণে তার স্বামী বিনয় চন্দ্র দীর্ঘদিন কর্ম থেকে বিরত আছেন। তবে এ পোষাক কারখানায় কাজ পেয়ে খুশি। মায়া রানী আরও বলেন, মাস শেষে ৫হাজার টাকা বেতন পাব, ছেলে-মেয়ে ও স্বামীকে নিয়ে দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকব ভাবতে ভাল লাগছে আমার।
কারখানায় কর্মরত আরেকটি নারী শ্রমিক কাজলী আকতার (২৮)। উপজেলার চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ী। ঢাকা সাভার ডিইপিজেট এ প্রায় ৪ বছর একটি পোষাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন। করোনা মহামারির কারণে চাকুরী হারিয়ে ৭মাস হলো বাড়ী এসেছেন। এমতাবস্থায় পরিবার পরিজন নিয়ে ২ ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে কষ্টে চলছে সংসার। তবে এ পোষাক কারখানায় মেশিন অপারেটরের চাকুরি পেয়ে দুঃখের দিন শেষ বলে মনে করছেন তিনি।
কেবল তারাই নয় উপজেলার সুতোনারা গ্রামের শারমিন আকতার(২৬) যমুনা পাড়া গ্রামের নারছিন সুলতানা(৩৪), চন্দনবাইশা গ্রামের শাকিলা বেগম (২৫) কড়িতলা গ্রামের কাটার মাষ্টার বেলাল হোসেন (৫০) বলেন, আমরা বাড়িতে থেকে এরকম একটি পোষাক কারখানায় কাজের সুযোগ পেয়ে নিজেকে ভাবতে ভাল লাগছে। ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকবো পাশাপাশি ছেলে-মেয়েকে স্কুলে লেখাপড়া করানোর সুযোগ পাব। এটা আমাদের জন্য খুবই ভাল।
ভিএম গামেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ শফিউল আলম ও ম্যানেজার মোঃ আপলে মাহমুদ আলোকিত বগুড়া’র প্রতিবেদককে বলেন , আমি দীর্ঘদিন মালেশিয়ায় ছিলাম। সে দেশের উন্নত কলকারখানার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এ প্রতিষ্ঠান গড়ছি। আজ এখানে ১৮জন শ্রমিক কাজ করছেন। তবে খুব শিঘ্রই শ্রমিকের সংখ্যা অর্ধশতাধিকে নিয়ে যাব। দক্ষ, অদক্ষ পুরুষ-মহিলা কর্মীদের বেকারত্ব দূর করার জন্য নদী বিধ্বস্ত এ এলাকাকে বেছে নিয়েছি। এতে উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সব মহলের আমরা ভাল সারা পাচ্ছি। আমরা ঢাকা থেকে কাঁচা মাল সংগ্রহ করার পর ঢাকার ইসলামপুরে তৈরী পোষাকের বাজারে বিক্রি করছি। এছাড়াও আর্ন্তজাতিক মানের পোষাক প্রস্তুত করে বিদেশি বাজার দখল করার জন্য চেষ্টা করছি। আমরা সফলতা পাব আশা করছি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাসেল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করা হলে আলোকিত বগুড়া’র প্রতিবেদককে তিনি বলেন, নদীর বিধ্বস্ত এলাকায় পোষাক কারখানা গড়ে উঠেছে জেনে আমার খুবই ভাল লাগছে। আশা করছি তারা দক্ষতার সাথে কারখানা পরিচালনা করে উপজেলায় অনেক গরীব, অসহায় নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ পাবেন। তারা আমার কাছ থেকে কোন সহযোগিতা চাইলে আমি সর্বাতক সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
Posted ৯:৫২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Alokito Bogura। আলোকিত বগুড়া | MTI SHOPON MAHMUD