বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগীকে সম্পদ বিবরণী দালিখের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বগুড়া সমন্বিত কার্যালয় বাবলু ও তার উপর নির্ভলশলীদের সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
দুদকের সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, সাংসদ রেজাউল করিম বাবলুর বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে জ্ঞাত আয় বহির্ভত সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এই কারণে সাংসদ ও তার উপর নির্ভরশীলদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য সাংসদ ২১ দিন সময় পাবেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংসদ রেজাউল করিম গোলবাগী ওরফে শওকত আলী গোলবাগী বলেন, ‘দুদকের কোনো চিঠি তিনি এখনো পাননি। আর বিস্তারিত জানতে হলে তার সাথে দেখা করতে বলেন।’ তবে এর আগে একাধিকবার সাংসদ রেজাউল করিম দাবি করে আসছেন, ‘আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই।’
গত সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মাসিক আয় ৪১৭ টাকা দেখান রেজাউল করিম বাবলু ওরফে শওকত আলী গোলবাগী। নির্বাচনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী হওয়ার দুই মাসের মধ্যে গাড়ি (নোয়াহ হাইব্রিড) কিনে আলোচনায় আসেন তিনি।
গত মার্চ মাসের শুরুতে তার সম্পদের প্রাথমিক তথ্য চেয়ে নোটিশ পাঠায় দুদকের বগুড়া কার্যালয়। চিঠিতে ১৪ মার্চের মধ্যে হাজির হয়ে সম্পদের প্রাথমিক হিসাব দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়। নোটিশের পরে ১৪ মার্চ তিনি বগুড়ার দুদক কার্যালয়ে যন। তবে সেদিন কোনো তথ্য জমা দেননি। রেকর্ডপত্র গোছানো না থাকার অজুহাত দেখিয়ে সম্পদের হিসাব জমা দিতে দুদকের কাছে সময় চান তিনি।
রেজাউল করিম গোলবাগী সেদিন বলেন, ‘আমি কাগজপত্র প্রমাণসহ আগামী তারিখে লিখিত জবাব দাখিল করব। দুদক কর্মকর্তারা আপাতত মৌখিকভাবে সময় দিয়েছেন।’ পরে দুদক তাকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময় দেয় সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দেয়ার জন্য। করোনার অজুহাত দেখি পরে অবশ্য প্রাথমিকভাবে সম্পদের তথ্য দিয়েছিলেন।
‘কপাল গুণে এমপি’
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলী ও পাশের উপজেলা শাজাহানপুর নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭। আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবেই পরিচিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই এ আসনে বিপুল ভোটে জয়ী হন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি। আসনে বিএনপির মনোনয়ন পান গাবতলীর বিএনপি নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিলটন। কিন্তু তার পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আসনটিতে নির্বাচন হয় বিএনপির প্রার্থী ছাড়া। এ অবস্থায় ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম গোলবাগীকে সমর্থন দেয় গাবতলী ও শাজাহানপুর বিএনপি। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তিনি জয়ী হন। এ জন্য স্থানীয়রা বলে থাকেন, রেজাউল করিম গোলবাগী সংসদ সদস্য হয়েছেন কপাল গুণে।
‘যেন আঙুল ফুলে কলাগাছ’
নির্বাচনে জয়ের দুই মাসের মাথায় বদলে যেতে থাকে তার আর্থিক অবস্থা। যেন আঙুল ফুলে হয়ে কলাগাছ হয়ে ওঠেন তিনি। কেনেন ৩৪ লাখ টাকা দামের গাড়ি। অথচ নির্বাচনী হলফনামায় তিনি বলেন, তার বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার টাকা। ভোটে দাঁড়ানোর আগে জমা টাকা ছিল ৩০ হাজার। চলাফেরা করতেন একটি পুরোনো মোটরসাইকেলে। সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় তার পেশা লেখা ছিল ব্যবসা ও সাংবাদিকতা। তার ও তার ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় পাঁচ হাজার টাকা। অর্থাৎ এমপি হওয়ার আগ পর্যন্ত তার মাসিক আয় ছিল ৪১৭ টাকা।
‘অস্ত্র হাতে ভাইরাল’
রেজাউল করিম গোলবাগীর একটি ছবি গত বছরের অক্টোবরে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছবিতে দেখা যায়, হাতে অস্ত্র নিয়ে হাসিমুখে একটি চেয়ারে বসে আছেন তিনি। পাশের টেবিলে আছে গুলির ম্যাগাজিন। ছবিটি ভাইরাল হওয়ার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন বগুড়ার এই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য।
Posted ১০:১৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১
Alokito Bogura। Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD