রবিবার ২৬শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

রেশম পোকা পালনে স্বচ্ছলতা গাইবান্ধার ৪৫০পরিবারে

গাইবান্ধা প্রতিনিধি   বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
147 বার পঠিত
রেশম পোকা পালনে স্বচ্ছলতা গাইবান্ধার ৪৫০পরিবারে

গাইবান্ধার তিন উপজেলার প্রায় ৪৫০ জন নারী রেশম পোকা পালন করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। সবধরনের উপকরণ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় এসব নারীকে। ফলে রেশম পোকা পালন তাদের নেই কোন খরচ। সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরা এসব নারীদের সফলতা দেখে অন্যরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন রেশম পোকা পালনে।

সুন্দরগঞ্জ রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলায় রেশম পোকার চাষ শুরু হয়। এসব উপজেলার প্রায় ৪৫০ জন নারী রেশম পোকা পালনে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২০০ জন, সাদুল্লাপুরে ১৫০ জন ও পলাশবাড়ীতে ১০০ জন। রেশম পেকার খাদ্য হিসেবে তিনটি উপজেলায় প্রায় এক লাখ তুঁত গাছ লাগানো হয়। তুঁত গাছের ডাল রোপণের একবছর পর তুঁত পাতা সংগ্রহ করা যায়। রেশম পোকা তুঁত পাতা ছাড়া অন্য কোন খাদ্য গ্রহন করেনা।


সূত্রটি আরও জানায়, রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, কুমিল্লা ও ঝিনাইদহ থেকে রেশম পোকার ডিম গাইবান্ধায় নিয়ে আসছে। পরে এসব ডিম বিনামূল্যে নারীদের দেওয়া হয়। এ ছাড়া পোকা পালনে তাদেরকে বিনামূল্যে ১৪ হাত দৈর্ঘ্য ও ৯ হাত প্রস্থের একটি টিনশেড ঘরও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘরে তারা রেশম পোকা পালন করেন। পোকা থেকে উৎপাদিত গুটি লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, ঝিনাইদহসহ মোট ১২টি ক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ক্রয়কেন্দ্রে রেশম গুটি থেকে সুতা তৈরি করা হয়। পরে সেই সুতা পাঠানো হয় রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁওয়ের কারখানায়। ওইসব কারখানায় টুপিস, থ্রিপিস, ওড়না, শাড়ী, চাদরসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি হয়। পরে সেই সব পোশাক সারাদেশে বিক্রি হয়।

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের আরাজি দহবন্দ গ্রামের রোজিনা বেগম (৩৮) বলেন, স্বামী ফরিদ মিয়া রিকশাচালক। পাঁচশতক বসতভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। দুই ছেলে অষ্টম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্বামীর আয়ে ঠিকমত সংসার চলেনা। উপরন্ত পড়াশোনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের সহায়তায় রেশম পোকা পালন শুরু করি। চারবছর ধরে কোন খরচ ছাড়াই পোকা পালন করছি। রেশমের গুটি তৈরি করছি পোকা থেকে। এই গুটি বিক্রি করে প্রতি বছর ৪৫থেকে ৫০হাজার টাকা আয় হচ্ছে। অভাব আর সংসারে হানা দিতে পারে না। রোজিনা বেগমের মত গাইবান্ধার প্রায় ৪৫০জন নারী রেশম পোকা পালনে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন। তারা সংসারের চাহিদা মেটানোর পরও বাড়তি উপার্জন করছেন।


একই গ্রামের মোজেমা বেগম (৪২) বলেন, স্বামী মোয়াজ্জেম হোসেন পান-সুপারির দোকার করেন। ছেলে হাফিজার (২৪) রিকশা-ভ্যান চালান। হাফিজার বিয়ে করে আলাদা থাকেন। বসতভিটা চার শতাংশ জমি ছাড়া আর কোন জমি নেই। রেশম পোকা পালন করে ছয় শতক জমি কিনেছি। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। প্রতিবছর ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা আয় করছেন।

একই ইউনিয়নের ফতেহখাঁ গ্রামের আরেক গৃহবধু মিলি বেগম বলেন, স্বামী সৈয়দ ফেরদৌস হাসান মানসিক রোগি। ঠিকমত সবকাজ করতে পারেন না। তাই মা-মেয়ে মুদি দোকান চালাই। দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছিল। দুইবছর ধরে রেশম পোকা পালন শুরু করি। মূলধন ছাড়া শুধু শ্রম দিয়েই প্রতিবছর ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছিন।


এসব গ্রামের কয়েকজন জানান, যারা রেশম পোকা পালন করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন তাদের সফলতা দেখে আরও অনেক নারী উদ্বুদ্ধ হয়েছে রেশম পোকা পালনে। তারাও চান রেশম পোকা পালন করে সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে। দরিদ্র পরিবারগুলো যাতে সংসারে সুখ মুখ দেখতে পারে এজন্য আরও বেশি সংখ্যক পরিবারে রেশম পোকা পালনের কার্যক্রম বাড়ানোর তাগিদ দেন তারা।

শুধু তাই নয়, এসব গাছ পরিচর্যা করে আরও ২৪ জন নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এসব নারী প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের বন্দনা রানী (৫০) বলেন, তুঁত গাছের পরিচর্যা করে প্রতি মাসে টাকা পাচ্ছেন। ফলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। আবার তুঁত গাছের ডাল রান্নায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করায় জ্বালানী ব্যয়ও কমেছে।

এ সব বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, দারিদ্রতা দূর করতে গাইবান্ধার তিনটি উপজেলায় রেশম পোকা পালনে নারীদের উদ্ধুদ্ধ করছে রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র। সুবিধাভোগিদের বিনামূল্যে ঘর নির্মাণ, ডিম সরবরাহ ও তুঁত গাছের পাতার যোগান দেওয়া হচ্ছে। তারা কেবলমাত্র শ্রম দিয়েই লাভবান হচ্ছেন। ভবিষ্যতে সারা জেলায় এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Facebook Comments Box

Posted ৮:৫১ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Alokito Bogura। আলোকিত বগুড়া |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক:

এম.টি.আই স্বপন মাহমুদ

বার্তা সম্পাদক: এম.এ রাশেদ

অস্থায়ী অফিস:

তালুকদার শপিং সেন্টার (৩য় তলা),

নবাববাড়ি রোড, বগুড়া-৫৮০০।

বার্তাকক্ষ যোগাযোগ:

মুঠোফোন: ০১৭৫০ ৯১১৮৪৫

ইমেইল: alokitobogura@gmail.com

বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন কর্তৃক নিবন্ধিত।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।
error: Content is protected !!