তরুণদের নতুন নতুন সৃজনশীল উদ্ভাবন এবং তাদের চিন্তা চেতনার সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতি অঙ্গনে তরুণদের পদচারণা যেন মুখর করেছে। দেশের তারুণ্যময় সৃজনশীল জগতের তেমনি এক মেধাবী সংস্কৃতি কর্মী ও অনলাইন উদ্যোক্তা মেধা। পুরো নাম মারজানা ইসলাম মেধা।
মারজানা ইসলাম মেধা, জন্ম ১৯৯৯ সালের ১২ জুলাই রাজধানী ঢাকার প্রাণ কেন্দ্র মোহাম্মদপুরে মুসলিম পরিবারে।বাবা রেমিটেন্স যোদ্ধা সাইদুল ইসলাম ও গৃহিণী মা শামিমা ইসলাম। তাদের ভালোবাসা, আদর সোহাগ আর আহ্লাদে শৈশব ও কৈশোর কাটিয়েছেন মারজানা ইসলাম মেধা।
২০১৭ সালে ট্রিনিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোহাম্মদপুর থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১৯ সালে ওয়াইড ভিশন কলেজ উত্তরা থেকে এইচ.এস.সি পাস করেন। ২০২১ বিএসসি (ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং) নিয়ে এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়ন করছেন। পাশাপাশি প্রফেশনাল কুকিং একাডেমি থেকে লেভেল ওয়ান এবং টু সম্পন্ন করছেন।
ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি নানা রকম সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র জীবনে বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের জন্য তিনি পেয়েছেন অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার। সমাজসেবা মূলক কাজেও তিনি পিছিয়ে নেই। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত তিনি গার্লস গাইড নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছেন সম্মাননা। ২০১০সাল থেকে নিয়মিত ছায়ানটের শিশুশিল্পী হিসেবে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে জাতীয় নৃত্যশিল্পী পুরস্কার অর্জন করেন।
তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে ইতোমধ্যে অনেকেরই নজর কেড়েছেন। বিশেষ করে রন্ধনশিল্পে তার আগ্রহী কর্মকান্ড অনেককেই মুগ্ধ করেছে। স্বাস্থ্যসম্মত এবং আন্তর্জাতিক মানের খাদ্য বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের দোর গোড়ায় কীভাবে পৌঁছে দেয়া যায় সে বিষয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা।
এছাড়া বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো নতুনভাবে সারাদেশের পাশাপাশি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে নানামুখী পরীক্ষা-নীরিক্ষা করছেন এই তরুণী। দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী খাবার, বিশেষ করে রান্নার পদ্ধতি ও ওই এলাকার রান্নার নিজস্বতা তুলে ধরতে কাজ করছেন প্রতিনিয়ত। নিজের নতুন স্বাদের রন্ধন পদ্ধতির উদ্ভাবনী প্রচেষ্টায় সফলও হয়েছেন।
ফলস্বরূপ বিভিন্ন পর্যায়ে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাতীয়ভাবে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছেন। নিজের মেধা, মনন এবং সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তি নিয়ে বিভিন্ন নান্দনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছেন তারুণ্যের প্রতীক মেধা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়দের কাছ থেকে তার খাবারের প্রশংসা শুনতে শুনতে তিনি ভাবতে শুরু করেন তিনি কেন এই রান্না নিয়ে কাজ শুরু করছেন না। অনলাইনে প্রচার-প্রচারণা দিন দিনে বাড়তে থাকে তার। মেধার রান্নার সুনাম ছড়িয়ে পড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে মেধা’স ফুড কর্ণার নামে অনলাইনে হোমমেড ফুডের বিজনেস চালু করেন।
ইচ্ছে শক্তি কাজে লাগিয়ে নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু হয় মেধার। বর্তমানে মেধার বেশ কিছু রেসিপি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। এর বাইরে মেধার বায়োগ্রাফি নিয়েও বিটিইএ বর্ষসেরা রন্ধন শিল্পী অ্যাওয়ার্ড ২০২১, বিসিক উদ্যোক্তা সম্মাননা ২০২২ অর্জন নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেশকিছু গণমাধ্যম।
এছাড়া ‘দি গ্লোবাল নেট’ পত্রিকার অনলাইন ও প্রিন্টেড ভার্সনে মেধার রেসিপি ইংরেজি ভাষায় প্রকাশ হয়েছে। এতে করে আন্তর্জাতিক ভাষাভাষী মানুষ রেসিপিগুলো সম্পর্কে জানতে পারছে।
মেধা বর্তমানে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স এসোসিয়েশন বিটিইএ এর উইমেন্স স্ট্যান্ডিং কমিটির এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে নিয়োজিত।
মেধার মা তাকে সব সময়ই মানসিকভাবে সহযোগিতা করেন। মেধার শক্তি হচ্ছে তার মা। আজ উদ্যোক্তা মেধা হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে তার মা সহ কিছু মানুষের অবদান অনেক। তার জন্য তিনি তাদের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মেধা আলোকিত বগুড়া’কে বলেন, রান্না আমার ভালোলাগা-ভালবাসা। আর সেই ভালো লাগা, ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই।
Posted ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ অক্টোবর ২০২২
Alokito Bogura। Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD