বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দ্রুতগতিতে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। ফলে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের মানুষেরা।
এদিকে, দ্রুতগতিতে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার সদর, চৌহালীর এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলায় তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাঁচিল গ্রামে অন্তত ২০টি বাড়ি-ঘর ও অর্ধশত গাছপালা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এসব বাড়ি-ঘরের অসহায় মানুষজন অন্যত্র আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ভাঙ্গণের হাত থেকে রক্ষার জন্য দ্রুত ঘর-বাড়ি ও আসবাপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় সচ্ছল কৃষকেরা সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছে। রাক্ষসী যমুনার তীব্র ভাঙ্গনে আশ্রয় হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে হাজারো মানুষের।
বুধবার (২১ জুন) দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, কাজিপুরের মেঘাই ঘাট ২৯ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ৩৪ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ করতোয়া নদীর পানি উল্লাপাড়া পয়েন্টে ৪০ সেন্টিমিটার এবং বড়াল নদীর পানি শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ি পয়েন্টে বেড়েছে ৬৯ সেন্টিমিটার।
পাঁচিল গ্রামের মির্জা সরকার, চতুর আলী, আব্দুল আলীম বলেন, দুই দিন আগেও আমাদের বাড়িঘর সব ছিল। আজ নদীতে সব হারিয়ে পথে বসেছি। নদী গর্ভে ঘর-বাড়ি বিলিন হওয়ায় কোথাও যাওয়ার মত অবস্থা নেই তাদের। মাথা গোজার ঠাই হারিয়ে তারা এখন ভাসমান মানুষে পরিণত হয়েছে।
পাঁচিল গ্রামের হযরত আলী, শিপলু সরকার ও জয়মালা খাতুন বলেন, ভাঙ্গণ এলাকার পাশেই কয়েক মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদাররা হাজার হাজার বালুর বস্তা প্রস্তুত করে ফেলে রেখেছে। কিন্তু ভাঙ্গণ শুরু হলেও তা ফেলার ব্যবস্থা না করায় চোখের সামনে তাদের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেল তাদের দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তারা অবিলম্বে এ ভাঙ্গণ রোধে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে দ্রুত ভাঙ্গণ রোধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রনজিত কুমার সরকার জানান, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন ধরেই যমুনার পানি বাড়ছে। এতে চরাঞ্চলের নিম্নভূমিগুলো প্লাবিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে। পানি আরও ২/৩ দিন বাড়তে পারে। ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
Posted ৬:২৯ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২১ জুন ২০২৩
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD