বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের নিদর্শন ও পুরাকীর্তি ধ্বংস করে দ্বিতলা ভবন নির্মাণ। অবশেষে উচ্ছেদ করলো প্রশাসন। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের জিয়ৎ কুণ্ডের পাশে। উন্নত দেশ ও জাতি নিজেদের ঐতিহ্য বা প্রাচীন নিদর্শনগুলো আগলে রাখে। নিজেদের সম্ভ্রান্ত পরিচয়কে শাণিত করে। গর্বের সঙ্গে সেগুলো তুলে ধরে দুনিয়ার সামনে। তারা যে একটি প্রাচীন সভ্য জাতিসত্তার উত্তরাধিকারী, সেটা তারা অহংকারের সঙ্গে বলে বেড়ায়। কিন্তু আমরা কেমন জাতি? কেন আমরা একের পর এক আমাদের সমৃদ্ধ অতীতকে অস্বীকার করছি? কেন আমাদের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পুরাকীর্তিগুলো ধ্বংস করে চলেছি?
ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নিদর্শন বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই জনপদের নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন। এই জনপদের রাজধানীটি কালের বিবর্তনে প্রোথিত হয়েছে মহাস্থানগড়ের ভূগর্ভে। ২০১৬ সালে এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই দুর্গনগরীর দক্ষিণ পাশে রয়েছে জিয়ৎ কুন্ড নামে পরিচিত এ কূপ।
ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রাজা পরশুরাম প্রসাদ নির্মাণের সময় কূপটি খনন করেন।এই জনপদকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে বহু পৌরাণিক কাহিনি। জিয়ৎ কুন্ডের পাশেই রয়েছে পশুরামের প্রাসাদ। ঐতিহ্যবাহী সেই দূর্গনগরী আজ বিলীনের পথে। জিয়ৎ কুপ ও পশুরামের প্রাসাদ সংলগ্ন স্থানে সংরক্ষিত এ এলাকায় কাঠ দিয়ে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেছেন, গড়মহাস্থান পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত রুস্তম আলীর পুত্র বাদশা মিয়া ও তার পুত্র জনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানা বলেন, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড় সারাবিশ্বেই পরিচিত। সেখানে পুরাকীর্তি ধ্বংস করে নির্মাণ করা হচ্ছিল একটি ভবন। যে জায়গায় ভবন নির্মাণ হচ্ছে এটি পুরোটাই অধিগ্রহণ বা একোয়ার করা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকায় সব ধরনের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা থাকলেও এরা কেউ মানে না। তারপরেও আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় নোটিশ পাঠিয়েছি কাজ বন্ধ করার জন্য। “কিন্তু আইনের তোয়াক্কা না করে তারা স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে রাতারাতি সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের এ স্থানে ভবন নির্মাণ করেছে”।
প্রত্নসম্পদ রক্ষার্থে আইনি প্রক্রিয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসনিমুজ্জানের নেতৃত্বে শিবগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় উচ্ছেদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জমির মালিক বাদশা মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, ১৩ শতক জমির দেড় শতাংশের ওপর দ্বিতলা ভবন নির্মাণ করেছি। জমিটি তো আমাদের। আশেপাশে অনেক বাড়ি ঘর হয়েছে আমিও করেছি।
তারা আক্ষেপ করে বলেন, জাদুঘরের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নয়ন ও রেজাউলের নানা অনিয়ম ও ঘুষ বানিজ্যের কথা। তারা টাকার বিনিময়ে বহুজনকে বাড়ি করার সুবিধা ও মহাস্থানগড়ে আসা পার্কিংয়ের গাড়ি রশিদ ছাড়াই নিয়ে আত্মসাৎ করে।
এ বিষয়ে ওই ২ কর্মচারীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মহাস্থান শালবাগানে যেসব গাড়ি পার্কিং হয় সেখানকার কর্তৃপক্ষরা রশিদ ছাড়া টাকা নেয়। মহাস্থান জাদুঘর এলাকায় কোন গাড়ি রশিদ ছাড়া টাকা নেওয়া কেউ প্রমান করতে পারলে আমাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে আমরা মাথা পেতে নিবো। আসলে এক শ্রেনীর অসাধু ব্যক্তিরা অন্যায় সুবিধা না পেয়ে তারা মহাস্থান জাদুঘরের কর্মরত সকল কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এহেন উপপ্রচার চালাচ্ছে বলে তারা যোগ করেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক আগে থেকেই সংরক্ষিত এলাকা মহাস্থানগড় স্থানীয়রা দখল করে বাড়িঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করেছে। উপযুক্ত সংরক্ষণ প্রচেষ্টা না থাকায় বহু নিদর্শন নষ্ট হয়ে গেছে। মূল্যবান জিনিসপত্র লাপাত্তা হয়ে গেছে। এমনকি ইট, টেরাকোটাও খুলে নিয়ে যাচ্ছে মানুষ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রত্নতাত্ত্বিক কার্যক্রম ছাড়া সেখানে সব ধরনের খনন কাজ নিষিদ্ধ করেছেন। তার পরও সেখানে নির্মাণ কাজ হয় কিভাবে? জাতি হিসেবে এ সবই আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাকর ও দুঃখজনক। সচেতন এলাকাবাসী প্রত্ননিদর্শন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে রক্ষ করতে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
Posted ১:২২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৩
Alokito Bogura || Online Newspaper | Sazu Mia