‘আকাশে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে! বসন্ত এসে গেছে’। বিবর্ণ প্রকৃতি জেগেছে নবরূপে। বসন্ত ও বিশ্ব ভালবাস দিবস আগে ভিন্ন ভিন্ন দিনে উদযাপন করা হলেও বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কারণে গত বছর থেকে একই দিনে উদযাপন করা হচ্ছে দিবস দু’টি।
ভালবাসতে কোনও নির্দিষ্ট দিনক্ষণ বা সময়ের প্রয়োজন হয় না। তারপরেও সারা বিশ্বে একটি বিশেষ দিনকে ভালবাসা প্রকাশের প্রতীক হিসেবে উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে দিনটি আশির দশক থেকে উদযাপন শুরু হয়। তবে, শুরুর দিকে এদেশে ভালবাসা দিবসটি তেমন জনপ্রিয়তা না পেলেও ধীরে ধীরে দিবসটি আড়ম্বরপূর্ণভাবে উদযাপিত হতে থাকে।
বিশ্বব্যাপী ভালবাসা দিবসে পরিবারের সদস্য, বন্ধু-বান্ধব ও প্রেমিক-প্রেমিকারা একে অপরের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করেন। তবে, ব্যতিক্রম দেখা যায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে। প্রেমিক-প্রেমিকারা তাদের ভালবাসার মানুষের প্রতি অনুভূতি প্রকাশের জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করেন।
বিশ্ব ভালবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে ঘিরে কয়েকটি ঐতিহাসিক ঘটনা প্রচলিত আছে। এরমধ্যে একটি হল- কারারুদ্ধ সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে তরুণ-তরুণীদের অনেকেই ফুল নিয়ে আসতেন। কারারক্ষীর এক অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে আসতেন। একসময় ভ্যালেন্টাইন তার প্রেমে পড়ে যান। তার চিকিৎসায় দৃষ্টি ফিরে পায় মেয়েটি। যুবক-যুবতীদের প্রতি তার ভালোবাসা আর ভ্যালেন্টাইনের প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা জানতে পেরে সম্রাট ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬৯ খিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ঘিরে অন্য আরেকটি মত প্রচলিত আছে তা হল,, ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ছিলেন শিশুপ্রেমিক, সামাজিক ও সদালাপি। তিনি ছিলেন খিস্ট্রধর্মের অনুসারী। তৎকালীন রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ছিলেন মূর্তিপূজারী। সম্রাট তাকে দেবদেবী পূজা করতে বললে তিনি তা অস্বীকার করেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সম্রাট ভ্যালেন্টাইনকে বন্দি করেন। পরবর্তীতে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। এ দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ থেকেই প্রেমিক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ দিনটি ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
এছাড়াও আরও একটি ইতিহাস প্রচলিত আছে- রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস তার বিশাল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে এবং যুবকদের সেনাবাহিনীতে যোগদানে বাধ্য করতে বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এ ঘোষণায় তরুণ-তরুণীরা ক্ষুব্ধ হয়।ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইনও সম্রাটের এমন ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হন। তিনি গোপনে গির্জায় বিয়ে পড়ানোর কাজ শুরু করেন। বিষয়টি সম্রাটের কানে গেলে ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন সম্রাট ক্লডিয়াস। গ্রেপ্তারের পর তাকে হত্যার নির্দেশ দেন সম্রাট।
বহু পুরানো এ দিনটিতে ভালবাসা প্রকাশের প্রধান অনুষঙ্গ ফুল হলেও এখন বদলেছে সময়। সময় সঙ্গে সঙ্গে উপহারের তালিকায় যোগ হয়েছে চকলেট, ক্যান্ডি বা দামি পণ্য। ভালবাসা দিবসটি বসন্তের ফুল ফোটার সময় হওয়ায় একে বসন্ত প্রেমের সময় বলেও প্রচলিত আছে।
বাংলাদেশে আগে পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস ভিন্ন দিনে উদযাপন করা হতো। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কারণে গত বছর থেকে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী দিন এবং ভালবাসা দিবস ১৪ই ফেব্রুয়ারি একই দিনে উদযাপিত হয়ে আসছে।
Posted ১২:১১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Alokito Bogura। আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD