বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্বেও বগুড়ায় জমি দখখে পাচ্ছে না মৃত ময়েজ উদ্দিনের পরিবার। বগুড়া সদর উপজেলার দৌবাড়িয়া গ্রামে প্রায় সাড়ে ১১বিঘা বিল একই এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ভোগদখল করে আসছে। কোন কাগজপত্র ছাড়াই তারা জোরপূর্বক দখল করে আছে।
জানা যায়, বগুড়া সদর উপজেলা অন্তভূক্ত ৪৯ নং দোবাড়িয়া মৌজার সি. এস ১৪ নং খতিয়ানভূক্ত সম্পত্তি সাবেক জমিদারের খাস দখলীয় ছিল। সাবেক জমিদার বিভিন্ন দাগে ময়েজ উদ্দিন ও অন্যান্যদের নিকট ১৯৫১ সালে পত্তন প্রদান করলে তাতে স্বত্ববান ও দখলদার নিযুক্ত হন। এর পর জমিদার উচ্ছেদ হলে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ময়েজ উদ্দিনসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে বাঁকী খাজনার জন্য সার্টিফিকেট মোকদ্দমা অনায়ন করে। এরপর ৩য় পক্ষের নিকট নিলামে বিক্রয় করা হয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন দাগে অন্যান্য ব্যক্তিরা রেজিষ্ট্রিকৃত কবলা দলিল মূলে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে ময়েজ উদ্দিনের কাছে বিক্রয় করে। ময়েজ উদ্দিন ২৬৩(৯-১)৮১-৮২ নং খারিজী কেসের গত ৩ মে ১৯৮২ তারিখের আদেশ মূলে উক্ত সম্পত্তি সরকারি পত্তনাদি প্রদান করতে থাকে। উল্লেখিত সম্পত্তি নিচু ডোবা শ্রেণীর জমি হওয়ায় ময়েজ উদ্দিন বর্ষার সময় মাছ চাষ করতেন। কিন্তু কিছু স্থানীয় লোকজন অন্যায়ভাবে এই সম্পত্তিতে মাছ ধরতে গেলে ময়েজ উদ্দিন ফৌজদারী আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তারা সরকারি কর্মকর্তাদের ভূল বুঝিয়ে তফসীল সম্পত্তি সরকারি সম্পত্তি দাবী করাতে বাধ্য করে। ময়েজ উদ্দিন সরকার ও উল্লেখিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করেন। গত ২১ অক্টোবর ১৯৯১ তারিখে ৪৫৮/৮৫ অন্য নং মোকদ্দমা দোতরফা সূত্রে বাদী ময়েজ উদ্দিনের পক্ষে রায় হয়। পরবর্তীতৈ এ রায়ের অসম্মতিতে সরকার পুনরায় আপীল মোকদ্দমা অনয়ন করলে তা খারিজ হয়। ফলে তফসীল সম্পত্তি ময়েজ উদ্দিনের স্বত্ব ও দখল প্রতিষ্ঠিত হয়। এবং ময়েজ উদ্দিনের অবর্তমানে তার ওয়ারিশগণ একক স্বত্ব বিদ্যামন রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে এই সম্পত্তি এলাকার কিছু ব্যক্তি জোর করে ভোগদখল করছে। বৈধ কাগজ থাকার পরেও ময়েজ উদ্দিনের পরিবার এসব সম্পত্তি দখল নিতে পাছে না।
দোবাড়িয়া পশ্চিম পাড়ার নজরুল ইসলাম জানান, এগুলো ময়েজ উদ্দিনের সম্পত্তি। দীর্ঘ বছর ধরে তার নামে এই এলাকায় প্রায় সাড়ে ১১ বিঘার উপর মাগুরার বিল, চেংরার বিল, ধোপার বিল, বউডুবি বিল ও আড়াইকুড়ি বিল নামে ৫টি পুকুর রয়েছে। কিন্তু সেগুলো ভোগ দখল করেছে এই এলাকারই কিছু প্রভাশালী ব্যক্তিরা। মৃত ময়েজ উদ্দিনের পরিবার তাদের এ সম্পত্তি এখনও ভোগ দখল করতে পারেনি। বর্তমানে পুকুরগুলো তাদের বেদখলে রয়েছে।
তিনি আরো জানান, দোবাড়িয়া মধ্যপাড়ার সাবলু, সাইদুল, দক্ষিণ পাড়ার দেলোয়ার হোসেনসহ আরো কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি মিলে এ পুকুরগুলো দেখাশুনা করেন।
একই এলাকার ফেরদৌ ও বেলাল জানান, তৎকালীন সময়ে ময়েজ উদ্দিন জমিদারের কাছ থেকে এই সম্পত্তি ক্রয় করেন। পরবর্তী সময়ে ময়েজ উদ্দিনের সাথে উক্ত সম্পত্তি নিয়ে গ্রামবাসীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। বর্তমানে দৌবাড়িয়া গ্রামের কিছু প্রভাশালী ব্যক্তি জমির মালিকান দাবি করে ভোগ দখল করছে।
ভোগদখলকারী গ্রামবাসী বলেন, উক্ত সম্পত্তির মূল মালিক ছিলেন তৎকালীন জমিদার ইন্দ্র কোমল নন্দী। ১৯৫০ সালে ইন্দ্র কোমল নন্দীর মৃত্যুর পর এ সম্পত্তির মালিক হয় তার দুই ছেলে বিনয় কোমল নন্দী ও রিদয় কোমল নন্দী। বিনয় কোমল নন্দীর সম্পত্তি ১৯৫১ সালের ২৪ এপ্রিলে দলিল নম্বার ৩৫৩৪ ক্রেতা ময়েজ উদ্দিন, দেরাছতুল্লাহ মন্ডল, খুদু মামুন প্রাং, ছকি উদ্দিন মন্ডল ও অছিমুদ্দিন সরকার ক্রয় করে ভোগ দখল শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ক্রেতা ময়েজ উদ্দিন অন্যান্য ক্রেতাদের নাম বাদ দিয়ে নিজ নামে সিএস , এমআর, আরএস, খতিয়ান ভুক্ত করে নিয়ে ভোগ দখল করার পায়তারা করলে গ্রামবাসীর সাথে ময়েজ উদ্দিনের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের জেরে উক্ত জমির দখল হতে উচ্ছেদ হয়ে যায়।
তারা আরোও বলেন, জমিদারের ছেলের কাছে দলিল ছিল সেই দলিল সূত্রে আমারা নিয়েছে। কাগজ কলমে জমি ময়েজ উদ্দিনের হয়ে আছে কিন্তু দখলে আমাদের। ময়েজ উদ্দিন এই মৌজায় অন্যান্য জায়গাতে জমি আছে। সেগুলো আমরা দখল করতে যাইনি। এগুলো দখল কেন করালাম নিশ্চই এর মধ্যে কিন্তু আছে। আমাদের পূর্ব পরুষেরা এগুলো ক্রয় করছে । সেই সূত্র ধরে আমরা এখনও দখলে আছি। এখন যদি ময়েজ উদ্দিনের নামে কাগজ হয়ে থাকে এবং তিনি যদি ডিগ্রী পায় তাহলে আমরা এসব জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য।
ময়েজ উদ্দিনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, এই সম্পত্তি ময়েজ উদ্দিনের ক্রয়কৃত। ময়েজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র তাজুল ইসলাম ও দুই কন্যা মাফতুনা বেগম ও ফেরদৗসী বেওয়া। যার সকল কাগজপত্র আমাদের কাছে আছে। এই সম্পত্তি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মোকর্দ্দমা হয়েছে। যা ২১ অক্টোবর ১৯৯১ তারিখে রায় এবং ২৭ অক্টোবর ১৯৯১ তারিখে ময়েজ উদ্দিনের পক্ষে ডিগ্রী আসে। বাংলাদেশ সরকার এই মোকর্দ্দমায় হেরে য়াবার পর পুনরায় আফরিল মোর্কদ্দমা দায়ের করলে আবারো হেরে যায়। যা বর্তামানে ময়েজ উদ্দিন এই সম্পত্তির মালিক হয়।
ময়েজ উদ্দিনের ২য় নাতনী সাদিকা নাসরিন বলেন, আমার নানা বেঁেচ থাকতে আমরা দেখেছি এই বিলগুলো আমার নানার। ২০০০ সালে নানার মৃত্যুর পর থেকে আমার মামা একক অংশীদার হলে তাকে এখানে আসতে দেয়া হয় না। কিছু দুস্কৃতিকারী যারা এই বিলগুলো দখল নেয়ার পায়তারা চালায়। মসজিদকে সামনে রেখে এই বিলগুলো দখল নেয়ার চেষ্টা চালায়। ২০১৮ সালে এই বিলগুলো ওয়ারিশদের মাঝে বন্টন করা হয়। ওয়ারিশসূত্রে এই বিলগুলো আমার মা পায়। আমাদের কাছে এই সম্পত্তির সমস্ত কাগজপত্র আছে। আমরা দখল নিতে গেলে গ্রামের ভোগদখলকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা হুমকি ধামকি দেয়। এমনকি প্রান নাশেরও হুমকি দেয়। আমাদের কাগজপত্র থাকা সত্বেও সম্পত্তি ফিরে পাচ্ছি না। আমরা আইনের মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি ফিরে পেতে চাই।
এদিকে এই সম্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ১০নম্বর লাহেড়ীপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুলফিকার আবু নাসের বলেন, আমি এ সম্পত্তির বিষেয় শুনেছি। এ বিষয়টি নিয়ে সমাধানের জন্য উভয় পক্ষের সাথে কথা বলেছি। মূল বিষয় হলো এই সম্পত্তির সঠিক কাগপত্র যাদের আছে তারাই মালিক হবেন। এখানে মুখের কথায় কোন কাজ হবে না। তবে এটা নিয়ে কোন বিশৃংখলা যেন না হয় সে বিষয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলবো। আশা করি আইনী প্রক্রিয়ায় সমাধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে বগুড়া সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নুরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টা আমি জানি। সদরের দৌবাড়িয়া এলাকার এই সম্পত্তির সকল খাজনা-খারিজ ময়েজ উদ্দিনের নামে পরিশোধ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত খাজনাখারিজ ময়েজ উদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হয়েছে। আমি তাদের কাগজপত্র দেখেছি। বর্তমানে যারা এই সম্পত্তি ভোগ দখল করে আসছেন তারা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। আমি কয়েকবার বলার পরেও তারা কোন যোগাযোগ করেননি।
Posted ১০:৫২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২
Alokito Bogura || Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD