বগুড়া সারিয়াকান্দিতে লাল মরিচ তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা । জমি থেকে লাল মরিচ উত্তোলন, তা বাড়ীর উঠানে বা টিনের চালে শুকাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। গত বছরগুলোর তুলনায় চারগুণ দামে বিক্রি করতে পেরে তারা বাম্পার লাভ পাচ্ছেন ।
এ বছর বন্যার পানি আগেই নেমে যাওয়ায় কৃষকরা আগাম জাতের বিভিন্ন জাতের ফসল জমিতে লাগিয়েছিলেন। এগুলোর মধ্যে অন্যতম মরিচ। লাল মরিচের জন্য বগুড়া বিখ্যাত। বগুড়ার মধ্যে যমুনানদী বিধৌত সারিয়াকান্দির মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় এখানে মরীচের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। সারা উপজেলার মরীচের গুলোতে এখন পাকা লাল মরীচ শোভা পাচ্ছে। উপজেলার যমুনা নদীর ৬ টি ইউনিয়নের ৬৯ টি চরে বেশি মরীচের চাষ হয়েছে। দেশী এবং হাইব্রিড মরিচের গাছগুলোতে শোভা পাচ্ছে বগুড়ার লাল মরীচ। জমি হতে লাল মরীচ এক তুলা বা দুইটি বা তার বেশি করে তোলা (উঠানো) দেয়া হয়েছে। যেগুলো কৃষকের উঠানে শুকাতে দেয়া হয়েছে। শুকনো মরীচগুলো এখন কৃষকের উঠানে হাসছে।
কর্ণিবাড়ী ইউনিয়নের শোনপচা চরের সিরাজ প্রাং এর ছেলে মামুন মিয়া বলেন, হামি প্রতিবছর মরিচের আবাদ করি। গত বছর দেশি মরীচত লোকসান হছিল। এ বছর ৫ বিঘা জমিত মরিচ করছি। হাইব্রিড মরিচ বেশ কয়েকবার কাঁচা বিক্রি করছি। দামও মোটামুটি ভালই পাছি। বেশ ভাল লাভ পাছি।
চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের মানিকদাইড় চরের সায়েদ মন্ডল জানান, প্রায় দশ বিঘা জমিতে তিনি মরীচের আবাদ করেছেন। পাকা মরীচগুলো জমি হতে তুলে তিনি উঠানে শুকাতে দিয়েছেন। সদর ইউনিয়নের চরবাটিয়ার আবু সাঈদসহ শত শত চরবাসীর লাল মরীচ জমিতে শোভা পাচ্ছে। কেউ জমিতে লাল মরীচ উত্তোলন করছেন। চরজুরে এখন মরীচ তোলার নয়নাভিরাম দৃশ্য। এ যেন এক উৎসব। গ্রামের গরীব নারীরা দিন চুক্তিতে তুলছেন লাল বা কাচা মরীচ।
কথা হয় উপজেলার পৌর এলাকার ষাটোর্ধ আলেফা বেগমের সাথে। তিনি জানান, সকাল হতে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত মরীচ তুলে পান ৩০০ টাকা। মরিচ চাষি সদরের পারতিত পরল গ্রামের লেবু মিয়া বলেন, এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ২০-২৫ হাজার টাকা। বাজারে ভাল দাম থাকায় গত একমাস আগে সবগুলো জমরি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। আবার কয়েকদিন পর আরও একটি তোলা দিতে পারব ।
পাইকারি ব্যবসায়ী হযরত আলী জানান, গত বছর মরীচের টাল কিনে লোকসান হয়েছে। কাজলা ইউনিয়নের মানিকদাইড় চরের একটি ৫০ বিঘার জমির মরীচ ৫২ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি । চড়া দামে কিনলেও ভাল লাভ পাচ্ছি ।
সারিয়াকান্দির মরীচের আড়তদার রফিকুল ইসলাম বলেন, কাঁচা মরীচগুলো আমারা ক্রয় করে খুলনার দৌলতপুরে বিক্রি করি। লাল টোপা (পাকা) মরীচগুলো এ উপজেলায় স্কয়ার, প্রাণ, একমিসহ বিভিন্ন কোম্পানির ডিলাররা কিনে নিয়ে যায়। সোমবার রাতে লাল টোপা মরীচ ৩৬০০ হাজার টাকা মণ এবং কাঁচা মরীচ ৪৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। যা গত বছর লাল প্রতিমণ ৮৫০ টাকা এবং কাঁচা ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ।
সারিয়াকান্দি হাটফুলবাড়ীর স্কয়ার কোম্পানির মরীচের ডিলার সুমন মিয়া জানান, প্রতি ৩ মণ লাল টোপা মরীচ শুকিয়ে ১ মণ শুকনা মরীচ পাওয়া যায়। বর্তমানে শুকনা মরীচের বাজার খুবই বেশ ভাল। এখন শুকনা মরীচের বাজার ১৬ হাজার হতে ১৮ হাজার টাকা মণ পর্যন্ত। যা অতিতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে ।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, গত বছর উপজেলায় ৩৬২০ হেক্টর জমিতে ৮ হাজার ৫২১ মেট্রিকটন মরিচ উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর মরীচের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬২০ হেক্টর অর্জন হয়েছে ৩১৭০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ১৯১৫ হেক্টর এবং দেশী ১২৫৫ হেক্টর । এ বছর ৮৮৭৬ মেট্রিকটন মরীচ উতপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, এ বছর বন্যা কম হওয়ায় কৃষকরা আগামভাবে চরাঞ্চলে মরীচের চাষ করেছেন। ফলন মোটামুটি ভালই হয়েছে। কৃষকরা বাম্পার দামও পেয়েছেন। এ বছর মরীচ চাষীরা ভাল লাভবান হয়েছেন ।
Posted ৩:১৩ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD