রবিবার ২৮শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

বগুড়ায় কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, বেপরোয়া ভূমি দস্যুরা; নেই প্রশাসনের নজরদারী

আলোকিত বগুড়া   সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২
128 বার পঠিত
বগুড়ায় কৃষি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়, বেপরোয়া ভূমি দস্যুরা; নেই প্রশাসনের নজরদারী

গাবতলী (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার গাবতলীতে সরকারী নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে তিন ফসলে কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে আসছে ভূমি দস্যুরা। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে বিভিন্নস্থানে অবৈধভাবে রাতের আধারে কৃষি জমির মাটি কেটে ইটভাটাসহ বিভিন্নস্থানে বিক্রি করছে তারা। এতে করে জমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। জমি হারাচ্ছে উর্বরতা। মাটি বহনকারী ট্রাক ও ভেকু চলাচলের ফলে অন্যান্য যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ওই এলাকার রাস্তাঘাট।

সরেজমিনে গাবতলীর মহিষাবান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ভূমি দস্যুদের বর্বরতা। ওই এলাকার ভূমি দস্যুরা বড় সিন্ডিকেট। মহিষাবান ইউনিয়নের বকরিভিটা গ্রামের ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ওরফে (চিকে রাজ্জাক) দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ মাটির ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। সে এলাকার মানুষকে
জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। তার ভয়ে এলাকার কেউ প্রতিবাদ ও মুখ খোলার সাহস পায় না।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক আলোকিত বগুড়া’র প্রতিবেদককে বলেন, আমরা যেসব জমিতে ফসল চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করি সেই সব জমির পাশে জোরপূর্বক এক্সেভেটর (ভিকু) মেশিন দিয়ে জমির মাটি কাটার ফলে হুমকির মুখে পড়ছে আমাদের আবাদি জমিগুলো। আমরা বাধা দিতে গেলে সে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখায়। আমরা অসহায় মানুষ তাই জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসে অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাচ্ছি না নাম প্রকাশের ভয়ে। কেননা এই ব্যবসায়ীরা এতটাই ক্ষমতাশালী যে উপজেলার প্রতিটা দপ্তরে এদের আসা-যাওয়া আছে। এরা পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তার সাথে সম্পর্ক রেখে নিজেদের ফায়দা লুটে। দ্রুত মাটি কর্তন বন্ধ করে কৃষকদের ফসল উৎপাদনে‌ সহায়তা করতে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন এলাকার জনসাধারণ।

উপজেলার মাটি সিন্ডিকেটের আরেক হোতা মহিষাবান ইউনিয়নের মফিয়াা ছয়মাইল এলাকার হাম্বি। হাম্বি মাটির সিন্ডিকেটের সদস্য ছাড়াও এলাকাতে তাকে সবাই বড় জুয়াড়ী হিসেবে চিনে। নিজের এলাকা ছাড়াও উপজেলার বাইরের অন্যান্য এলাকাতে সে জুয়া খেলা পরিচালনা করে থাকে। হাম্বির ভাগিনা মাসুদ সে সরাসরি মাটি সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। সে মরিয়া ছয় মাইল এলাকাতে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে।


সোর্স সূত্র ধরে মাসুদের সাথে কথা হলে সে আলোকিত বগুড়া’র প্রতিবেদককে জানান, আমি থানা পুলিশ ম্যানেজ করে এবং সব ধরনের ঝুরঝাট এড়াতে রাতের আঁধারে মাটি কেটে থাকি। তারপরেও হালকা কিছু ঝুর ঝামেলা থাকলেও সেগুলো আমি মুহূর্তেই ম্যানেজ করে ফেলি।

মাটির সিন্ডিকেটের আরো এক সদস্য হলেন রানীর পাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ, চকমড়িয়া গ্রামের আব্দুল হান্নান, কর্নিপাড়া গ্রামের আবু সাঈদ, মাহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য শাহজাহান আলী।


মহিষাবান ইউনিয়নের প্রবীণ বয়োজ্যেষ্ঠ মোকসেদুর রহমান জানান, আমরা মূর্খ মানুষ অফিস আদালত সম্পর্কে খুব একটা জ্ঞান না থাকলেও যতটুকু জানি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্য করে স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজ করে এই এলাকার মাটি সিন্ডিকেটের সদস্যরা অবৈধ ভাবে তিন ফসলি আবাদি জমি পুকুরের পরিনত করছে। এই অবৈধ পুকুর খননে সহযোগীতা করছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। এসব পুকুর খননের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে এলাকার কৃষি জমি। এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে ১০-১২ ফিট গভীর করে পুকুর খনন করে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে ইট ভাটায়। যার ফলে মাটির সংকটের কারণে চাইলেও কখনোই আর পুকুরকে জমিনের রুপ দেওয়া যাবে না। আমরা জনসাধারণ কঠোরভাবে মাটি কর্তন রোধে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলোকিত বগুড়া’কে বলেন, ‘উপরিভাগের মাটি বিক্রি করা কৃষির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এতে কমে যাচ্ছে আবাদি জমির উৎপাদন। ফলে অধিক চাষাবাদেও ফলন কম হচ্ছে। একবার টপ সয়েল কেটে নিলে তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক সময় লাগবে। অথচ থামছে না মাটি কাটার মহোৎসব।

মাটি কর্তনের বিষয় নিয়ে গাবতলীর নবাগত ইউএনও আফতাবুজ্জামান আল-ইমরান জানান, অত্র এলাকার ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Facebook Comments Box

Posted ১১:৩৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২২

Alokito Bogura। আলোকিত বগুড়া |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক:

এম.টি.আই স্বপন মাহমুদ

বার্তা সম্পাদক: এম.এ রাশেদ

অস্থায়ী অফিস:

তালুকদার শপিং সেন্টার (৩য় তলা),

নবাববাড়ি রোড, বগুড়া-৫৮০০।

বার্তাকক্ষ যোগাযোগ:

মুঠোফোন: ০১৭৫০ ৯১১৮৪৫

ইমেইল: alokitobogura@gmail.com

বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন কর্তৃক নিবন্ধিত।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।
error: Content is protected !!