কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছি ইউনিয়নের গুচ্ছ গ্রামের শিশু মাসুদ হাসান। বয়স সবে মাত্র ৯ বৎসর। যে সময় তার বই-খাতা কাঁধে নিয়ে স্কুলে যাবার কথা, সেই সময়ে সে এখন বাবার পঙ্গুত্বে পরিবারের আয়ের একমাত্র প্রধান উৎস্য। পরিবারের সবার মুখে ভাত তুলে দিতে সারাদিন খেয়ে না খেয়ে নিজের সাধ্যের অতিরিক্ত ভার বহন করে বেড়ায়। শারীরিক শক্তি-সামর্থ্যে ব্যর্থ হলেও পরিবারের হাল ধরতে তার চেহারায় ফুঁটে উঠে প্রাণপণ চেষ্টার বহিঃপ্রকাশ।
এলাকাবাসী জানায়, মাসুদের পিতা শহিদুল ইসলাম (৩৮)। ছোট বেলায় শহিদুলের হাত পুড়ে বিকলাঙ্গ হযে পড়েন। এক পর্যায়ে বিয়ে করে ঘর সংসার শুরু করেন শহিদুল। তার ঘরে জন্ম নেয় দুটি কন্যা এবং দুটি পুত্র সন্তান। শহিদুল ইসলাম নিজের সংসার চালাতে গত ৪ বছর আগেও রিক্সা, ভ্যান এবং ফুটপাতে ভাপা-পিটা বিক্রি করে সংসার চালাতো। কিন্তু গত ৩/৪ বছর থেকে সে শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। এখন আর আগের মত রিক্সা-ভ্যান কোন কিছুই চালাতে পারেন না। স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়েও থাকতে পারেন না। পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে অনেক কষ্টে দুই কন্যাকে বিয়ে দিলেও এর মধ্যে ছোট কন্যার যৌতিক চাহিদা মিটাতে না পাওয়ায় সে এখন বাবার বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।
পিতা শহিদুল ইসলাম শারীরিকভাবে কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় আর কোন কর্মক্ষম সন্তানাদি না থাকায় বাধ্য হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন। সকাল হলেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে চোখে পড়ে পিতা-পুত্রের দুঃসহ্য কষ্টের চিত্র। দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে মাসুদ হাসান (৯)। সে ভ্যানের প্যাডেল মারতে না পারলেও মাঝে-মধ্যে ঠেলে নিয়ে বেড়ায় পঙ্গু পিতাকে। অবুঝ এই শিশুর কষ্ট দেখেও নীরব দর্শকের মত চেয়ে দেখেন শহরবাসী।
কথা হলে পঙ্গু শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি নিরুপায়। কোন উপায় না পেয়ে দুধের শিশুকে দিয়ে ভ্যান টানছি। খারাপ লাগলেও করার কিছু নেই। কেউ সহযোগিতা করলে অনেক উপকৃত হইতাম।
কান্না জড়িত কন্ঠে মাসুদ হাসান (৯) জানান, সকালে খাবার থাকলে খাই। না থাকলে এমনিতেই বের হই। আমি ভ্যান টানতে পাই না। বিশেষ কর উঁচু জায়গায় মানুষের সহযোগিতা নিয়ে ভ্যান উঠাতে হয়। এতে আমার খুব কষ্ট হয়।
এলাকার আব্দুর রহিম ও আলমগীর হোসেন বলেন, সমাজের অনেক বিত্তবান মানুষ আছেন। সকলকে এই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো উচিত।
Posted ১:৪১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২২
Alokito Bogura। আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD