দেলোয়ার হোসেন, পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ শীত মৌসুমকে কেন্দ্র করে পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ও তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম গুলোতে শুরু হয়েছে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই সুস্বাদু খেজুর রস শীত কালের এক অপরিহার্য উপাদান, অনেকে এ কারনে খেজুর গাছকে মধু বৃক্ষ বলে সম্বোধন করেন। এখনো শীতের তীব্রতা তেমন দেখা না মিললেও এর মধ্যে সীমিত পরিমানে রস সংগ্রহ শুরু করেছেন এ অঞ্চলের গাছীরা।
এ ব্যাপারে রাজশাহীর জেলার বাঘা উপজেলার মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন আলোকিত বগুড়া’কে বলেন, জান্নাত হোসেন ও দুলাল হোসেন পাঁচবিবি উপজেলায় খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ২০-২৫ বছর পূর্বে পাঁচবিবির কোঁকতারা এলাকায় এসে তাবু গেরে মৌসুমী ব্যবসা চালাতে থাকে। গাছ থেকে সব রস সংগ্রহ করে। দুইটি দল মিলে ২০০-২৫০ গাছের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত থকে তারা।
এসব মৌসুমী ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমরা মালিকের কাছ থেকে ৩ কেজি গুড় এর বিনিময়ে প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে থাকি। তাদের কাছ থেকে সব খুচরা বিক্রেতারা গুড় পাইকারি নিয়ে যায় বলে জানায়। প্রথম কামানে, প্রতিগাছে ৫-১০ কেজি করে রস নামে। প্রতি ১০ কেজি রস জাল করে ১ কেজি গুড় পাওয়া যায় বলে জানান। প্রতিকেজি গুড় বিক্রি করেন ১৩০ টাকা কেজি দরে। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ও নির্ভেজাল গুড় হওয়ায় এই এলাকায় এই গুড়ের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা।
রস জ্বাল দেওয়ার জ্বলানী হিসেবে তারা ব্যবহার করেন কাপড়ের ঝুট। প্রতিমণ ঝুট ২৩০ টাকা দরে কেনা হয়। প্রতি মৌসুমে আমাদের খরচ হয় ১ লক্ষ টাকা, সব খরচ বাদে লাভ থাকে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা।
গ্রামীন জনপদের নবান্ন উৎসবের অপরিহার্য উপাদান খেজুরের রস আর গুড়। তাই শীতের শুরুতেই খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছীরা। শীত মানেই হরেক রকমের পিঠা, পায়েশ ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টান্ন আর এর মূল উপাদান খেঁজুর গুর ও রস, তাই বাঙ্গালী খাদ্য তালিকায় খেজুর গুড় পেয়েছে এক বিশেষ স্থান। কিন্তু দিন দিন এই খেঁজুর গাছগুলো বিলিন হয়ে যাচ্ছে, অনেকের মতে ইটভাটার কারনে নির্বিচারে খেজুরগাছ নিধন করা হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানান। এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনের ও বৃষ্টিপাত কমে যাওয়া, পরিবেশের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারনে খেজুর রস কম হচ্ছে- ফলে গুড় উৎপাদনকারীরা বাজারে চাহিদা অনুযায়ী যোগান বজায় রাখতে চিনির সাথে কাপড়ের রং, আটা, সুগন্ধি মিশিয়ে খেজুর গুড় হিসেবে বাজার জাত করছেন, আর সাধারন ক্রেতাগন গুড় কিনে প্রতারিত হচ্ছেন অন্যদিকে ভেজাল গুড় প্রতিনিয়ত মানব দেহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করছে । এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ভোজন রসিক বাঙ্গালিদের বিভিন্ন খাদ্য তালিকা, হারিয়ে যাচ্ছে হরেক রকম মিষ্টি মিষ্টান্নের ঐতিহ্যবাহী স্বাদ। আধুনিকতা ও যান্ত্রিকতার ছোয়ায় বাঙ্গালী ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আজ হুমকির সম্মুখীন তাই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য, প্রথা, সংস্কৃতি রক্ষার্থে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশ বান্ধব কর্মকান্ড, বক্ষ নিধন রোধের মত পদক্ষেপ গুলো ব্যাপক কার্যকরী হবে বলে আশাবাদী সমাজের সচেতন মহল।
Posted ৮:০৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ৩১ অক্টোবর ২০২২
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD