চলতে শুরু করেছে স্বপ্নের মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত দেখিয়েছে তার ‘পারফরমেন্স’। পরীক্ষামূলক এই চলাচলে যদিও ছিল না যাত্রী। ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে উত্তরার মেট্রোরেলের ডিপো থেকে যাত্রা শুরু পল্লবী ঘুরে আবারও উত্তরায় পৌঁছে ট্রেনটি। ডিপোতে সবুজ পতাকা উড়িয়ে পরীক্ষামূলক এ চলাচলের উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
আগামী বছরের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল সবার জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ‘০০৫’ নম্বরের ট্রেনটি চালান জাপানি নাগরিক ওয়াকত। এদিকে দ্রুতবেগে এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কাজ। দৃশ্যমান হচ্ছে দিয়াবাড়ি টু আগারগাঁওয়ে মেট্রো রেলপথ। ইতিমধ্যেই এ রুটে মেট্রোরেলের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। সংযোগ দেওয়া হয়েছে দিয়াবাড়ি থেকে মিরপুর পল্লবী পর্যন্ত রেল চলাচলের ট্র্যাকসহ বৈদ্যুতিক লাইন। অন্যদিকে মেট্রোরেলের কাজের কারণে ধুলাবালি আর সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী। তারপরও ‘সহ্য করে স্বপ্নের মেট্রোরেলের দিকে তাকিয়ে’ আছেন, বলছেন তারা।
ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ী মেট্রোরেলের ডিপোতে দুই সেটের মোট ১২টি কোচ পৌঁছেছে। এর মধ্যে প্রথম সেটের ছয়টি ২১ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় সেটের আরও ছয়টি কোচ ১ জুন ঢাকা পৌঁছায়। গত ১১ মে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেলের ডিপোর ভিতরে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের সামনে চালিয়ে দেখানো হয় এই বৈদ্যুতিক ট্রেন। আর গতকালের পরীক্ষামূলক চলাচলের উদ্বোধনের ‘ট্রায়াল’ হিসাবে গত শুক্রবার উত্তরা দিয়াবাড়ী ডিপো থেকে মিরপুর ১২ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো চালানো হয় মেট্রোরেল।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় পরীক্ষামূলক চালানো হবে মেট্রোরেল। যদিও এ সময় কোনো যাত্রী বহন করা হবে না। দুই বগি নিয়েই প্রথম দিকে চলবে এই ট্রায়াল। তবে তা বাড়ানোও হতে পারে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, যাত্রীবহনের সময় মেট্রোরেলে প্রতিটি সেটে থাকবে চারটি যাত্রীবাহী কোচ। আর তার দুই দিকে থাকবে দুটো ইঞ্জিন। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। প্রতি বর্গমিটারে আটজনের হিসাবে ব্যস্ততম সময় একটি ট্রেনে প্রায় ১৭০০ যাত্রী চলাচল করতে পারবেন।
জানা গেছে, প্যাকেজ-৩ ও ৪ এর আওতায় উত্তরার উত্তর অংশ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণকাজ অন্তর্ভুক্ত। ইতোমধ্যেই পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল, পাইল ক্যাপ, আই গার্ডার, প্রিকাস্ট গেমেন্ট কাস্টিং, পিয়ার হেড, ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব প্যারাপেট ওয়াল ভায়াডাক্টের ওপর স্থাপন, ৫টি লং স্প্যানসহ সব স্টেশনের উপ-অবকাঠামো ও ছাদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। উত্তরার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ এবং পল্লবী স্টেশনের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। সব স্টেশনের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্লাম্বিং কাজসহ যাত্রীদের প্রবেশ-বাহির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, মেট্রোরেল লাইন-৬-এর কাজ সার্বিক সম্পন্ন করতে ছয় মাস লাগবে। তাছাড়া ছয়টি মেট্রোরেল ২০৩০ সালে শুরু হবে। এরমধ্যে ৩১ জুলাই পর্যন্ত কাজের ৬৮ দশমিক ২৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে। উত্তরা থেকে মিরপুর পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ।
এদিকে সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর-১২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের নিচের কাজ শেষ হলেও সড়কের মেরামত করা হয়নি। শুধু আগারগাঁও থেকে পরিকল্পনা কমিশন পর্যন্ত সড়কের কিছুটা অংশ মেরামত করা হয়েছে। ভাঙা সড়কের কারণে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। যদিও তারা এসব সহ্য করে সুদিনের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে অভিযোগেরও কমতি নেই এলাকাবাসীর।
মিরপুরের বাসিন্দা শাহেদ আলম বলেন, ভালো কাজে ভোগান্তি থাকেই। তারপরও সহ্য করছি। আগামীতে সহজ-সুন্দর কিছু পাবো বলেই অপেক্ষা। একই এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা বলেন, ‘রাস্তাঘাট ভেঙেচুড়ে একাকার। রিকশায় চলাফেরা করতে গিয়ে আমিই দুবার উল্টে পড়েছি। শুনছি- মেট্রোরেলের কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন অন্তত সড়কপথ মেরামত করা উচিত বলে মনে করি।’
পল্লবী এলাকার এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘মিরপুর-১২ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বেশির ভাগ সড়কে বড় বড় গর্ত। এই সড়কে গাড়ি চললেই ধুলাবালি উড়ে বায়ু দূষণ হচ্ছে। কিন্তু কে রাখে কার খবর? তারপরও ভালো একটি কাজ হচ্ছে। আগামী দিনগুলো ভালো হবে ভেবে তার অপেক্ষায় আছি।’
দুর্ভোগ ভোগান্তির বিষয়ে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। তখন অর্ধলক্ষাধিক মানুষ যাওয়া-আসা করতে পারবে। আর মেট্রোরেলের নিচে সড়কপথজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ লাগানো হবে। মেট্রোরেলের পথজুড়ে পাতাবাহার, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, কুর্চি, রাধাচূড়া, হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, বকুল, পলাশসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে মেট্রোরেলসহ তিনটি মেগা প্রকল্পের দ্রুত উদ্বোধনের সুসংবাদ দিয়েছেন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
মেট্রোরেলে পরীক্ষামূলক চলাচলের উদ্বোধনের আগে এক অনুষ্ঠানে সেতু মন্ত্রী তিনি বলেছেন, ‘২০২২ সালের জুনে পদ্মা সেতু চালু করা হবে। এরপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল এবং ডিসেম্বরে মেট্রোরেল ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ’
পরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে ছিলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসমাম, জাপান দূতাবাস প্রতিনিধি হিরোইওকি ইয়ামায়া (জাপান), জাইকা বাংলাদেশ অফিস প্রথান ইহুও হায়েকাওয়া ও ঢাকা ম্যাস র্যাপিড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন এম সিদ্দিক, জাপান, জাইকার কর্মকর্তাবৃন্দ, মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা।
Posted ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট ২০২১
Alokito Bogura। Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD