মহাস্থান (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ আদি সভ্যতার বাংলার নবান্ন উৎসব বাঙালির জীবন যেন অধিকার করে আছে। নতুন ধান থেকে পাওয়া চাল দ্বরা হয় পালিক হয় নবান্ন উৎসব। হিন্দু লোকো কথায় এদিনকে বলা হয়ে থাকে বাৎসরিক মাঙ্গলিক দিন। নতুন আমন চালের ভাত বিবিধ ব্যঞ্জনে অন্নাহার, পিঠেপুলির উৎসবের আনন্দে মুখর হয় জনপদ। মেয়েকে নাইয়র আনা হয় বাপের বাড়ি। নতুন ধানের ভাত মুখে দেওয়ার আগে কোথাও কোথাও দোয়া, মসজিদে শিন্নি দেওয়ার রীতিমতো রেওয়াজও রয়েছে। তবে নবান্নের বেশিভাগ উৎসব পালিত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে। তাই বাংলা আগ্রহায়ণ মাসের এ নবান্ন উৎসব উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় আজ শুক্রবার বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থান বাজারেও বসেছে বড় মাছের মেলা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় মহাস্থান মৎস্য মেলার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলায় ছোট-বড় সব ধরনের মাছের পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সকাল থেকেই শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থান বাজারে দূর-দূরান্ত থেকে আগত মানুষ আসেন মাছ কিনতে। মেলা উপলক্ষে এ এলাকার ধনী, গরীব তাদের সাধ্যের সীমাবদ্ধতায় প্রতিটি বাড়িতে বড় বড় মাছ ও নতুন সবজি কিনে স্বজনদের আপ্যায়নের আয়োজন করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এ মেলায় মাছ কেনাবেচা হয়। হাটে ব্ল্যাক কার্প, রুই কাতল, ব্রিগেড, সিলভার কার্প বাগারসহ হরেক রকমের মাছ আমদানি করা হয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে মহাস্থান এবার মাছের দাম অনেকটায় কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতারা। মেলায় বিশালাকৃতির রুই-কাতলা ৪৫০ থেকে থেকে ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া ২৪০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে ব্ল্যাক কার্প, বিগহেড ও সিলভার কার্প মাছ বেচাকেনা হয়েছে।
নবান্নের কথা বললেই সাধারণত উঠে আসে নতুন আলু বিচিত্র সবজি আর মাছ। তাই শুধু হরেক রকম মাছ-ই নয়, নবান্নের সাজে সাজানো হয়েছে মহাস্থান সবজি বাজারে সব ধরণের নতুন সবজির পসরা। তবে গতবারের তুলনায় নবান্নের এ মেলায় নতুন পাকড়ি নামের আলু বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা দরে, এ্যালভেলি জাতের আলু বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে। শিম, কপি, মুলা, লাউ সহ অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক দামেই বিক্রি করতে দেখা গেছে।
হাটে মাছ কিনতে আসা স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নবান্ন উৎসব মানে বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এ উৎসবে মেতে উঠেন। কিন্তু বাড়ির পাশে বড় বড় মাছের মেলা অনেকেই কিনছেন সামাজিক ভাবে না কিনলে অপূর্ণতা থেকে যাবে তাই মাছ কেনা। স্থানীয়দের মত আশপাশের আট দশগ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষই কেনাকাটা করে। লোকজনও প্রায় প্রতিযোগিতা করে তুলনামূলক বড় মাছ কিনে বাড়িতে নিয়ে যায়।
মহাস্থানের এ মেলাটি বেশ কয়েক বছর হলো হাক-ডাকের মাধ্যমে ক্ষুদ্র পরিসরে আয়োজন করা হলেও বর্তমান এটি ব্যাপক ভাবে আলোচিত হয়েছে। এখন এ মেলায় শুধু গ্রাম-গঞ্জের লোজনই নয় মাছের মেলার খবর পেয়ে শহর থেকেও অনেকে আসেন মাছ কিনতে।
Posted ৮:৩৫ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD