বগুড়ার নন্দীগ্রামে ধানে মাজরা পোকা দমনের নকল ওষুধ ”জেনিকার্ব-২৫ ডপ্লিউপি” কীটনাশকে বাজার সয়লাব হয়েছে। নকল এই কীটনাশক জমিতে প্রয়োগ করে পোকা দমন না হওয়ায় শতাধিক কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে।
জানা গেছে, নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউপির ধুন্দার বাজারে মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহিম ওরফে সবুজ মাস্টার এর দোকানে ধানের মাজরা পোকা দমনের জেনারেল এগ্রো কেমিক্যাল লি: কোম্পানির “জেনিকার্ব-২৫ ডপ্লিউপি” নকল ওষুধ দীর্ঘদিন যাবৎ বিক্রি করে আসছে। সবুজ মাস্টারের বাড়ি ধুন্দার পূর্বপাড়া এবং সে ধুন্দার স্কুল এন্ড কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক।
স্থানীয় কৃষকরা সবুজ মাস্টার এর দোকান থেকে “জেনিকার্ব-২৫ ডপ্লিউপি” কীটনাশক কিনে জমিতে প্রয়োগের ১০-১২ দিন পর লক্ষ্য করেন যে তাদের জমিতে মাজরা পোকা দমনের পরিবর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পোকা দমন না হওয়ায় কৃষকরা সবুজ মাস্টারের কীটনাশক দোকানে গিয়ে কারণ জানতে চাইলে সবুজ মাস্টার কারো সাথে দুর্ব্যবহার করেন, কাউকে আসল “জেনিকার্ব-২৫ ডপ্লিউপি” ওষুধের প্যাকেট দেন, কাউকে অন্য কোম্পানির প্যাকেট দিয়ে শান্ত করেন এবং কাউকে ব্যস্ত আছি বলে দোকান থেকে তারিয়ে দেন। আরো একাধিক কৃষকদের জমিতে মাজরা পোকা দমন না হওয়ায় তারা বৃহস্পতিবার সন্ধা ০৭:৩০টায় সবুজ মাস্টারের কীটনাশক দোকানে গিয়ে সমস্যার কথা বললে তাদের সাথেও দূর্ব্যবহার করেন সবুজ মাস্টার। একপর্যায়ে তিনি তাদের আসল “জেনিকার্ব-২৫ ডপ্লিউপি” হাতে ধরিয়ে দেন। ওই সময় কৃষকের কাছে পূর্বের “জেনিকার্ব-২৫ ডপিউপি” প্যাকেটের সঙ্গে মিলিয়ে দেখেন দুটা দুরকম। এই নকল কীটনাশক বিক্রির খবর পুরো বাজারে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ভীড় জমাতে থাকে সবুজ মাস্টারের কীটনাশক দোকানে। তৎক্ষণাৎ সবুজ মাস্টার তার দোকানে থাকা নকল “জেনিকার্ব-২৫ ডপ্লিউপি” একাধিক ওষুধের কার্টুন এবং প্যাকেট অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যান। কৃষকরা থানা পুলিশকে নকল কীটনাশক বিক্রির সংবাদ দিলে সবুজ মাস্টার ভয়ে দোকান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। পরে স্থানীয়রা তাকে ধরে দোকানে আনে।
নন্দীগ্রাম থানার এএসআই আবুল কালাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আসল এবং নকল “জেনিকার্ব-২৫ ডপ্লিউপি” দুইটি প্যাকেট থানায় নিয়ে যান।
এই ঘটনায় আপুছাগাড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক লায়েব আলী বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে মাজরা পোকা মারার জন্য সবুজ মাস্টারের নিকট হতে ৪ প্যাকেট জেনিকার্ব কিনি কিন্তু একটা পোকাও মরে নি বরং জমিতে পোকা আরো বেশি হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, সবুজ মাস্টারের কীটনাশক দোকান থেকে ধানে পোকা মারার জন্য জেনিকার্ব ওষুধ কিনেছিলাম কিন্তু কোন পোকা মরে নি, জমিতে পোকা বেশি হয়েছে। তারা সবাই বলেন, আসল জেনিকার্ব ওষুধের পাউডার গাড় বাদামী কালার হয় কিন্তু সবুজ মাস্টারের নিকট হতে যে জেনিকার্ব কিনেছি সেটার পাউডার সাদা কালার। এছাড়া আসল জেনিকার্ব ওষুধের প্যাকেটের গায়ে কোম্পানির কিউআর কোড রয়েছে কিন্তু নকল জেনিকার্ব ওষুধের প্যাকেটের গায়ে কিউআর কোড অপশন নেই। সবুজ মাস্টারকে সমস্যার কথা বললে সে বলেছে এটা কোম্পানির ওষুধ পোকা মরবে কি না তা আমি জানি না। এই নকল কীটনাশক জমিতে দিয়ে আমাদের যেমন টাকা নষ্ট হয়েছে তেমনি ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা এর সঠিক বিচার চাই।
বুড়ইল ইউপি আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম কীটনাশক বিক্রেতা সবুজ মাস্টারের দোকান থেকে পুলিশ আসল এবং নকল দুই প্যাকেট থানায় নিয়ে গেছে। পরিক্ষায় যদি ভেজাল ধরা পড়ে তবে তার শাস্তি হওয়া উচিত। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কীটনাশক ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম ওরফে সবুজ মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমি কোম্পানি থেকে আসল ওষুধ ক্রয় করে কৃষকদের মাঝে বিক্রয় করেছি, যদি নকল হয়ে থাকে সেই দায় দায়িত্ব কোম্পানির আমার নয়।
তিনি আরো বলেন, গত ৯সেপ্টেম্বর আমি আমার দোকান খুলতে এলে আতিকুল ইসলাম সহ কিছু লোকজন আমাকে ঘিরে ধরে ,এবং নানা ধরনের প্রশ্ন করতে থাকে। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে উক্ত আতিকুল আমাকে মারপিট করে। বর্তমানে আমি নানা ভাবে হুমকি ধামকির মুখে আছি। এব্যাপারে জেনারেল এগ্রো কেমিক্যাল লি: কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন আমি এখন ব্যাস্ত আছি কথা বলার সময় নেই।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ১নং বুড়ইল ইউপি দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো: জহুরুল ইসলাম জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি এবং এই সবুজ মাস্টারের নামে ইতিপূর্বেও নকল কীটনাশক বিক্রয়ের অভিযোগ আছে । জেনিকার্ব-২৫ পরিক্ষা করার পর যদি নকল বা ভেজাল প্রমানিত হয় তখন তার দোকানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে, এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষিবিদ গাজিউল হক বলেন, নকল ওষুধ বিক্রয়ের ঘটনা শুনেছি স্থানীয় কৃষকরা মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছে। ঘটনা সত্যতা যাচায়ের জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জাকিরুল ইসলামকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আজ ৯ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা জাকিরুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সবুজ মাস্টার একাধিকবার দোকান থেকে নকল কীটনাশক অন্যত্র সড়িয়ে নিয়েছেন বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম।
Posted ১০:৩৯ অপরাহ্ণ | শনিবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD