বুধবার ৩১শে মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

দেশ ও দেশের বাইরে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দই

এম.টি.আই স্বপন মাহমুদ   শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২
1338 বার পঠিত
দেশ ও দেশের বাইরে জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার দই

দই পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কমই রয়েছে আর তা যদি হয় বগুড়ার দই তাহলে তো কথাই নেই। দই নামটি শুনলেই প্রথমে বগুড়ার নামটি চলে আসে। কী এমন আছে বগুড়ার দইয়ে? বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বগুড়া জেলার বিখ্যাত বগুড়ার দই। দধি বা দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। সারা বাংলাদেশে দই পাওয়া গেলেও স্বাদে ও গুণে অতুলনীয় হওয়ায় বগুড়ার দই দেশ ও দেশের বাইরে খুব জনপ্রিয়।

বগুড়ার দই এর খ্যাতি মূলত ব্রিটিশ আমল থেকে সর্বত্র ছড়িয়ে পরে। ষাটের দশকের প্রথম ভাগে বৃটেনের রানী এলিজাবেথ থেকে শুরু করে মার্কিন মুল্লুকেও গিয়েছে বগুড়ার দই। পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্তাদের সহানুভূতি পেতে পাঠিয়েছিলেন এই দই।


বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি প্রথম ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ে ১৯৩৮ সালে। তখন বাংলার গভর্নর ছিলেন স্যার জন এন্ডারসন। তিনি নওয়াববাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। তাঁকে কাচের বাটিতে দই খেতে দেওয়া হয়েছিল। তিনি মুগ্ধ হয়ে এ দই ইংল্যান্ডে রপ্তানির পরিকল্পনা করেছিলেন।


বগুড়ার দইয়ের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পরপরই বগুড়ারই শেরপুর উপজেলা থেকে। বগুড়ার শেরপুরে প্রথম দই তৈরি হয় প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে। তৎকালীন বগুড়ার শেরপুরের ঘোষ পরিবারের ঘেটু ঘোষ প্রথম দই তৈরি আরম্ভ করেন। শেরপুরের মতো সুস্বাদু ও মানসম্পন্ন দই দেশের আর কোথাও তৈরি হয় না। কারণ এখানকার আবহাওয়া দই তৈরির জন্য ভালো। এখানকার পানিও সুস্বাদু। তা ছাড়া এত দক্ষ কারিগরও অন্য কোথাও মিলবে না। এখন শেরপুরের বিখ্যাত দইয়ের দোকান সাউদিয়া, জলযোগ, বৈকালী, আলিবাবা, সম্পা ইত্যাদি।

দই কয়েক রকম হয়ে থাকে—টক দই, সাদা দই, চিনিপাতা দই ও মিষ্টি দই। সাধারণত এসব দই মাটির পাত্রে বাজারজাত করা হয়। সরা, পাতিল, কাপ, বাটি ইত্যাদি নামে পাত্র গুলো বেশ পরিচিত।


স্থানীয়দের মতে, সনাতন ঘোষ সম্প্রদায় দই তৈরি করে বগুড়াকে দেশের সর্বত্র পরিচিত করে তুলেছিল। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো হলেও স্বর্ণযুগ ছিল স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে। সেসময় এর প্রস্তুত প্রণালী ছিল অতি গোপনীয়। জানা যায় ঘোষেরা যখন দই তৈরি করত তখন এর গোপনীয়তা বজায় রাখতো, ফলে বাইরের কেউ দই তৈরি করতে পারত না। পরবর্তীতে সেটিকে আর তারা ধরে রাখতে পারেনি। এখন শেরপুরেই অনেক ব্যবসায়ী দই তৈরি করে। এদের মধ্যে ঘোষ পরিবারের লোকদের সংখ্যা অনেক কম। তবে সেই ঘোষদের হাতে এখন আর দইয়ের বাজার নেই। আস্তে আস্তে এটি চলে গেছে মুসলিম সম্প্রদায়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের অধীনে। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এতে আলাদা মাত্রা যোগ করেন বগুড়া সদরের মহরম আলী ও বাঘোপাড়ার রফাত আলী।

এখন বগুড়া শহরে জিরো পয়েন্টের সাতমাথায় বেশির ভাগ দইয়ের দোকান। দইয়ের দোকান আছে প্রায় তিন শতাধিক।

দই তৈরিতে প্রয়োজন হয় হয় গরুর দুধ, চিনি, সামান্য পরিমাণ পুরোনো দই ও মাটির একটি হাঁড়ি বা সরা। কড়াই বা পাতিলে দুধ জ্বাল দেয়ার মাধ্যমে দই তৈরি করা হয়ে থাকে।

টক দই তৈরি থেকে বংশ পরম্পরায় তা চিনিপাতা বা মিষ্টি দইয়ে রূপান্তরিত হয়। আর কালের বিবর্তনে স্বাদের বৈপরীত্যের কারণে দইয়ের বহুমুখী ব্যবহার শুরু হয়। টক দই দিয়ে মেজবানের রান্না ও ঘোল তৈরি হয়। অতিথি আপ্যায়নে চলে মিষ্টি দই।

✍️লেখক: এম.টি.আই স্বপন মাহমুদ
সম্পাদক, আলোকিত বগুড়া (অনলাইন পত্রিকা)

[প্রিয় পাঠক, আপনিও আলোকিত বগুড়া অনলাইনের অংশ হয়ে উঠুন। বিভিন্ন সম-সাময়িক বিষয় নিয়ে লিখুন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ছবিসহ মেইল করুন- alokitobogura@gmail.com-এ ঠিকানায়। লেখা আপনার নামে প্রকাশ করা হবে।]

Facebook Comments Box

Posted ৫:০২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২

Alokito Bogura। আলোকিত বগুড়া |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক:

এম.টি.আই স্বপন মাহমুদ

বার্তা সম্পাদক: এম.এ রাশেদ

অস্থায়ী অফিস:

তালুকদার শপিং সেন্টার (৩য় তলা),

নবাববাড়ি রোড, বগুড়া-৫৮০০।

বার্তাকক্ষ যোগাযোগ:

মুঠোফোন: ০১৭৫০ ৯১১৮৪৫

ইমেইল: alokitobogura@gmail.com

বাংলাদেশ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এসোসিয়েশন কর্তৃক নিবন্ধিত।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত।
error: Content is protected !!