সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি শিল্প পাড়ায় খাঁচি তৈরী করছেন কয়েকজন নারী শ্রমিক। ছবি- আলোকিত বগুড়া।
আসন্ন ঈদ-উল-ফিতরের ঈদকে সামনে রেখে সেমাইয়ের খাঁচি তৈরীর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কারিগররা। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত চলছে এ খাঁচি তৈরীর কাজ। ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে স্কুল পড়–য়া কিশোর-কিশোরীরা হাত লাগাচ্ছেন এ কাজে। এমনটি চলছে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি শিল্পপাড়া এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দু’বছর করোনার কারনে স্থবির থাকার পর হিন্দুকান্দি শিল্প পাড়া এলাকার এ বৃহৎ জনগোষ্ঠী ঈদকে সামনে রেখে সেমাইয়ের খাঁচি তৈরীর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এ পাড়ার প্রায় দু’শ পরিবার এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। বংশ পরম্পরায় এ পাড়ার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ বাঁশ দিয়ে তালাই, চাটাই, হোচা, ঝাড়–র শলা, গোমাই, ধান-গম রাখার ডোল, ঘরের ছাদ ইত্যাদি দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজের জন্য ব্যবহারের জিনিসপত্র তৈরী করে থাকলেও সা¤্রতিক সময়ে সেমাই রাখার জন্য খাঁচি তৈরী করছেন।
এ পণ্যটির ৮/৯ বছর ধরে চাহিদা আরো বেড়েছে। কারন নামি-দামী সেমাই কারখানায় উন্নতমানের প্যাকেট ব্যবহার করা হলেও ঈদকে সামনে রেখে মৌসুমী সেমাই কারখানার মালিকদের কাছে বাঁশ দিয়ে তৈরীর খাঁচির চাহিদা অনেক। তারা বছর জুড়ে কারখানায় সেমাই রাখার জন্য খাঁচি ব্যবহার করলেও ঈদুল ফিতরের ঈদকে সামনে রেখে বাঁশ দিয়ে তৈরী খাঁচির চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণ। যার কারনে খাঁচি তৈরীর কারিগরদের ডাক পড়ে যায় বেশী। কারিগররা কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধা পর্যন্ত খাঁচি তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
সারিয়াকান্দির হিন্দুকান্দি শিল্প পাড়ার বাসিন্দারা প্রায় কয়েক হাজার খাঁচি তৈরী ও সরবরাহ করলেও ফুলবাড়ী ইউনিয়নের ছাগলধরা ও নারচি ইউনিয়নের কুপতলা গ্রামের শিল্প পাড়ার লোকেরা শ’ শ’ খাঁচি তৈরী ও তা সরবরাহ করে থাকে। হিন্দুকান্দির শিল্পপাড়ায় গতকাল সকালে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খাঁচি তৈরী করছেন, সাথি আক্তার (২১), হাছনা বেগম (৪৫), লতিফন (৫০), পারভীন (৩২), কল্পনা বেগম (৪০) ও স্কুল পড়ূয়া ইবেতন (১২)। কথা হয় তাদের সাথে তারা আলোকিত বগুড়াকে বলেন, আমাদের হাতে এখন অনেক কাজ, কথা বলার মতো সময় আমাদের কাছে নেই। যে যার মতো খাঁচি তৈরীতে মনোযোগ দিয়েছেন। প্রতিটি খাঁচি তৈরী বাবদ পারিশ্রমিক পাই ১৫ টাকা। দিনে ১০ থেকে ১২টি খাঁচি তৈরী করে থাকি একেক জন। এ টাকা দিয়ে কোন মতে দিন যায়। আমাদের কথা লিখে কি লাভ। কেউ আমাদের কিছু দেয়না, রাখেনা কেউ কোন খোজ-খবর। আমরা সরকারীভাবে কোন সাহায্য-সহযোগিতা পাইনা।
পৌর এলাকার ১নং ওয়ার্ড কমিশনার মিলন প্রামানিক বলেন, আমার এলাকায় প্রায় দু’শ পরিবার বাঁশের এ শিল্পের সাথে জড়িত। তাদেরকে তেমন কিছু দেওয়া হয়না এটা সত্য। আশা করি পরবর্তিতে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত জনগোষ্ঠীর কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন না। তবে করলে আমরা তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে। এছাড়াও তাদের উৎপাদিত পণ্য বিকশিত ও বাজারজাত করার জন্য সরকারীভাবে উদ্যোগ নেয়া হবে।
Posted ৭:৫৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২২
Alokito Bogura। Online Newspaper | MTi SHOPON MAHMUD