বগুড়ার আদমদীঘিতে এক প্রভাবশালী মাতবরের উঠানে কোরবানির পশু জবাই না করা ও ফিতরার একটি অংশের টাকা তার কাছে জমা না করার অপরাধে তিন পরিবারকে প্রায় দুই বছর ধরে সমাজচ্যুত করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের স্টেশনপাড়া গ্রামে। এঘটনায় ভুক্তভোগী একই গ্রামের আব্দুস ছামাদ খন্দকার, ফেরদৌস আলী ও মোজাফ্ফর আলী এই তিন পরিবার প্রতিকার চেয়ে গত ৯ফেব্রয়ারী বুধবার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপ কামনা করে লিখিত অভিযোগ করেছেন। উপজেলা নির্বাহি অফিসার শ্রাবণী রায় অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করার জন্য উপজেলা সমাজ সেবা অফিসারকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
সমাজচ্যুত পরিবারের সদস্য আব্দুস সামাদ খন্দকার, ফেরদৌস আলী ও মোজাফ্ফর হোসেনের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, প্রায় দুই বছর পুর্বে কোরবানী ঈদের সময় ওই গ্রামের প্রভাবশালী মাতবর ও উপজেলার লক্ষীকোল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু নঈম লিংকন তার বাড়ির উঠানে গ্রামের সকলকে কোরবানীর পশু জবাই করা ও ঈদুল ফিতরের ফিতরার এক অংশের টাকা তার নিকট জমা করার জন্য গ্রামবাসিদের নির্দেশ দেন। কিন্তু ওই গ্রামের উল্লেখিত তিন ব্যক্তি প্রভাবশালী মাতবর আবু নাঈম লিংকনের নির্দেশ না মেনে নিজেদের উঠানে তারা কোরবানীর পশু জবাই করেন এবং ফিতরার অংশের টাকা প্রদান থেকে বিরত থাকেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন প্রভাবশালী মাতবর আবু নঈম লিংকন। এক পর্যায়ে ঈদ পরবর্তীতে ওই মাতবর তার সহযোগীদের নিয়ে গ্রামে শালিস বৈঠক করেন। শালিস বৈঠকে মাতব্বরের উঠান ব্যবহার না করা ও ফিতরার অংশের টাকা প্রদান না করে মাতবরকে অসম্মান করার অপরাধে ওই তিন পরিবারকে সমাজচ্যুত করা হয়। সমাজচ’্যত তিন পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ অনেকের দারস্থ হন । কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে বিষয়টির কোন সমাধান না হওয়ায় চরম বিপাকে রয়েছেন সমাজচ্যুত পরিবারগুলো ।
সরজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে সমাজচ্যুত পরিবারের সদস্য আব্দস ছামাদ খন্দকার, মোজাফ্ফর আলী ও ফেরদৌস আলী গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জানান, বর্তমানে তিন পরিবারের সদস্যদের সাথে গ্রামের কাউকে মেলামেশা করতে দেয়া হয় না । গ্রামের কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়া ও নেওয়া হয় না। গ্রামের কেউ তাদের সাথে মেলামেশা করতে চাইলে প্রধান মাতবর ও তাদের অনুসারীরা নানা হুমকি ধামকি দেন এবং তাদেরও সমাজচ্যুত করার ভয় দেখান।
মাতব্বর আবু নঈম লিংকন জানান, আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা, সমাজের সিদ্ধান্তের সাথে তারা এক মত পোষণ করেননা তাই সমাজের অন্যন্যরা তাদের পছন্দ করেননা। তাদেরকে সমাচ্যুত করা হয়নি।
ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক আবু বলেন, ঘটনাটি আমি শুনেছি তবে কেউ আমাকে জানায়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রাবনী রায় অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদানের জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি।
Posted ১১:৩৪ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Alokito Bogura। আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD