সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জ শহরের মেসার্স সমরেশ ট্রেডার্স এ হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন নামে অবৈধ খাবার স্যালাইন এখন সারা জেলায় সয়লাব।
চোখ ধাঁধানো বাহারি মোড়ক ও চটকদার তথ্য প্রচার করে এসব স্যালাইন জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিক্রি করছে মেসার্স সমরেশ ট্রেডার্স এর প্রোঃ শ্রী সমরেশ দাস।
কিন্তু বাজারে বিক্রি হওয়া কথিত হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন প্যাকেটের গায়ে লেখা উপাদান ও পরিমাণের কোনো মিল নেই।
হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির অনুমোদন ছাড়াই এ পণ্য তৈরি করছে। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডও মানছে না। বিএসটিআইয়ের কোন অনুমোদন নেই। বিএসটিআই স্যালাইনের মানদণ্ড নির্ণয়ও করতে পারে না। এমন এক অবস্থায় হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন বাজারজাত চলছে। মানুষ চটকদার কথার প্রলোভনে পড়ে নির্দ্বিধায় এসব পান করছে।
বুধবার (১৫ মার্চ) দুপুরে শহরের মেসার্স সমরেশ ট্রেডার্স এ সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৩১০ কাটুন হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন কিনেছেন তিনি। যাবার বাজার মূল্য ১ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা। তার অর্ডার বুকে হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইনের ঠিকানা দেওয়া আছে দক্ষিণ বাঘবপুর, পাবনা, বাংলাদেশ।
বাজার থেকে সংগৃহীত স্যালাইনের প্যাকেট থেকে স্যালাইন ও প্রস্তুতকারক সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম জানা গেছে। এগুলো হল-ইউনিভার্সাল টেস্টি স্যালাইন, ইউনিভার্সাল ফুড লিমিটেড, দিলালপুর, পাবনা; ইন্ট্রা টেস্টি স্যালাইন, ইন্ট্রা ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বলরামপুর, পাবনা; শ্যামলী টেস্টি স্যালাইন, শ্যামলী ফুড প্রডাক্টস লিমিটেড, পাবনা; সোশ্যাল টেস্টি স্যালাইন, সোশ্যাল ফুড প্রডাক্টস, রাজবাড়ী; বেনিসন টেস্টি স্যালাইন, বেনিসন ফুড প্রডাক্টস, গাজীপুর ও টেস্টি স্যালাইন-প্লাস, টেস্টি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা। কিন্তু এখানে হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন (এইচ এফ হোসেন ফুড) নামে কোন নামই নেই।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন হাত বাড়ালেই স্যালাইন। শুধু ওষুধের দোকানেই নয়, স্যালাইন মিলছে মুদির দোকানেও। ডায়রিয়া বা যেকোনো ধরনের পানিশূন্যতা পূরণের জন্য খাচ্ছি স্যালাইন। খাওয়াচ্ছি শিশুদেরও। সুসংবাদ বটে। কিন্তু ‘টেস্টি’ স্যালাইনের নামে কী খাচ্ছি আর কী খাওয়াচ্ছি? অনুমোদন ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই কথিত কিছু খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করছে টেস্টি স্যালাইন। এসব টেস্টি স্যালাইন স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে-এমন সাবধানবাণী শুনিয়েছেন তারা। এসব স্যালাইন কোমলপানীয় বা এনার্জি ড্রিঙ্কস হিসেবেও বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ডও মানছে না।
হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন এর সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা ও বগুড়া জেলার এরিয়া ম্যানেজার আশিক আহমেদ বলেন, এই বিষয়ে আমার সাথে কথা না বলে আপনারা মালিকের সাথে কথা বলেন।
হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন এর পাবনা কারখানার ম্যানেজার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে আমাদের এই প্রডার্কস বাজার-জাত করা হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের কোন অনুমোদন নেই। অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইন এর স্বত্ত্বাধিকারী আজগর হোসেন বলেন, বিএসটিআইয়ের কোন অনুমোদন নেই। তবে ট্রেড লাইন্সেস আছে। সেই অনুযায়ী আমার এই টেস্টি স্যালাইন সারা দেশে বাজার-জাত করছি। তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে ল্যাব টেস্ট করে এই টেস্টি স্যালাইন তৈরী করছি।
মেসার্স সমরেশ ট্রেডার্স এর প্রোঃ শ্রী সমরেশ দাস বলেন, কোম্পানীর প্রতিনিধি আমাকে বলেছে এই টেস্টি স্যালাইনের অনমোদন আছে। সেই কারণে আমি সিরাজগঞ্জ জেলার ডিলার হিসেবে এই টেস্টি স্যালাইন বাজারজাত করছি।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ রামপদ রায় বলেন, হোসেন নিউ টেস্টি স্যালাইনের বিষয়ে আমার জানা নেই। আমি আজকেই লোক পাঠিয়ে বিষয়টি দেখছি। তিনি আরো বলেন, বিএসটিআই কোনো টেস্টি স্যালাইনের অনুমোদন দেয় না। অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের স্যালাইনে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
Posted ৫:০৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
Alokito Bogura || আলোকিত বগুড়া | MTi SHOPON MAHMUD